জ্বর ঠোসা নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ চারটা তথ্য জানাতে আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি লিখতে বসেছি। জ্বর ঠোসার ভাইরাসের কারণে প্রতি বছর অনেক মানুষ অন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ দৃষ্টি শক্তি হারায়। আবার এটা যৌনাঙ্গের ছড়িয়ে হারপিস নামক রোগ সৃষ্টি করতে পারে যেটা একবার হলে সারাজীবন থেকে যায়। আবার বয়স হলে যে রোগের কারণে স্মৃতি শক্তি লোপ পায় ( Alzheimer’s Disease ) রোগ অর্থাৎ সেই রোগের সাথে এই ভাইরাস এর সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
এই জ্বর ঠোসা যে এত বড় ক্ষতিকর কারণ হতে পারে সেটা আমরা জানি না বলে এটাকে সাধারণত আমরা হেলাফেলা করে থাকি। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি চারটা উপায় নিয়ে কথা বলবো যার মাধ্যমে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
চোখের সুরক্ষা
আমাদের চোখে সামনে একটি পরিষ্কার আবরণ থাকে যার নাম হচ্ছে কর্নিয়া। এই কর্নিয়া কিছুটা চোখের জানালার মত কাজ করে। কর্নিয়ার সমস্যার কারণে সারা বিশ্বে যত মানুষ অন্ধ হয়ে যায় তার মধ্যে সবচেয়ে হারপিস ভাইরাস এর কারণে। অর্থাৎ যেই ভাইরাসের কারণে জ্বর ঠোসা হয়।
জ্বর ঠোসা থেকে ভাইরাস যদি চোখে চলে যায় তাহলে একটা বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন?এজন্য চারটা জিনিস খেয়াল রাখবেন। যেমন :
১. জ্বর ঠোসা হলে সেখানে হাত লাগাবে না।
২. যদি স্পর্শ লেগেও যায় তাহলে হাত খুব ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
৩. চোখে হাত লাগাবেন না।
৪. চোখে হাত দেওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিন।
এটা নিয়ে খুব ভয় পাবেন না। এই ভাইরাস চোখে চলে যাওয়া মানেই যে অন্ধ হয়ে যায় ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম না। অনেকের ক্ষেত্রেই এটা সেরে যায়। তবে জটিল ইনফেকশন হওয়া যেহেতু একটা সম্ভাবনা আছে, তাই সতর্ক থাকায় শ্রেয়।
যৌনাঙ্গের হারপিস থেকে সুরক্ষা
যৌনাঙ্গে হারপিস থেকে সুরক্ষা বা প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে জর ঠোসা সম্পন্নভাবে সেরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সঙ্গীর গোপনাঙ্গের কাছে বা যৌনাঙ্গের কাছে মুখ না নেওয়া। এখন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জ্বর ঠোসা কখন ছোঁয়াচে?
জ্বর ঠোসা চামড়ায় উঠার আগে থেকেই এটা ছোঁয়াতে হয়। জ্বর ঠোসা ওঠার আগে থেকেই কিন্তু একটু বোঝা যায়। যেমন: চামড়া জ্বালাপোড়া করা। এই অনুভূতিটা যখন থেকে হয়, তখন থেকেই এই ভাইরাসটা ছোঁয়াচে। তাই যখন এটা বুঝতে পারবেন সেখান থেকে একদম জ্বর ঠোসা সেরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবগুলো সাবধানতা মেনে চলবেন।
আলঝেইমার্স রোগ ( স্মৃতিশক্তি সংক্রান্ত )
আপনারা হয়তো কিছু বয়স্ক মানুষ দেখেছেন যাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে, কোন কিছুই মনে রাখতে পারে না, একই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞেস করে অথবা কথা বলতে গেলে কথা খুঁজে পাই না, এগুলো সবগুলোই আলঝেইমার্স রোগের লক্ষণ।
এই রোগের সাথে জ্বর ঠোসা ভাইরাসের একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে সম্প্রতি কিছু গবেষণায়। Oxford থেকেই চলতি মাসে একটা গবেষণা হয়েছে, এই ভাইরাসটার কারণেই যে আলঝেইমার্স রোগটা হচ্ছে, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। কিন্তু অনেকগুলো গবেষণা সেই দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তাই আপনাদের যদি জ্বর ঠোসা হয়, তাহলে আপনি খুব খেয়াল রাখবেন যেন, আপনার কাছ থেকে এই ভাইরাস আশেপাশের মানুষের না ছড়ায়। কিভাবে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন? আপনার যখন জ্বর ঠোসা হয় তখন আপনার খাবার পানি আরেকজনের সাথে শেয়ার করবেন না। জ্বর ঠোঁসায় লাগে এমন জিনিসপত্র যেমন: চামচ, Razer, Lipstick, Lipgel এগুলো আলাদা রাখবেন যেন আরেকজন ব্যবহার না করে।
আর আগে যে সর্তকতা গুলোর কথা বলেছে জ্বর ঠোসা হলে হাত না লাগানো, হাত ধোয়া ইত্যাদি প্রথম থেকেই এইসব সাবধানতা গুলো মেনে চলবেন। যদি এ রোগটি হয় খুব বেশি ভয় পাবেন না। বড় বড় গবেষণা চলছে এবং গবেষণা থেকে যদি কোন প্রতিকার বা ওষুধ আসে। সেটা সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো এবং তখন আমরা সবাই একসাথে সেই রোগে চিকিৎসা করাতেও পারবো।
নবজাতক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকলে এই ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে new born baby বা নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে। আমরা অনেক সময় নবজাতক শিশুকে আদর করতে গিয়ে চুমু দেই। জ্বর ঠোসা থাকা অবস্থায় যদি কেউ নবজাতক শিশুকে চুমু দেয় তখন তো তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা গড়ে ওঠেনি, তখন এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে তার মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও পর্যন্ত হতে পারে।
তাই আপনার যদি জ্বরঠোসা থাকে, তাহলে আপনার আশেপাশের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেমন: নবজাতক শিশু, গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস আছে এমন রোগী বা ক্যান্সারের রোগী বা অন্য যেকোনো কারণে যদি কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাদের পাশে খুব সাবধান থাকবেন।
যেন এ ভাইরাস না ছড়ায়, এতক্ষন যে সতর্কতা গুলোর কথা বলেছি সেগুলো মেনে চলবেনা।
জ্বরের সাথে জ্বর ঠোসার কি সম্পর্ক?
আচ্ছা, এই দুইটা কি একই জিনিস? উত্তর হচ্ছে না। জ্বর ঠোসা আর জ্বর সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
জ্বর অনেক কারণে হতে পারে আর জ্বর ঠোসা হয় একটা নির্দিষ্ট ভাইরাসের কারণে যার নাম হারপিস ভাইরাস। এ ভাইরাস যদি একবার শরীরে ঢুকে সারাজীবন থেকে যায়। যার কারণে বারবার জ্বর ঠোসা হয়। সাধারণত এই ভাইরাসটা চুপ করে বসে থাকে, তেমন ঝামেলা করে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেগে উঠে জ্বর ঠোসা তৈরি করে।
কখন কখন এই ভাইরাসটা জেগে ওঠে? যদি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। যেমন : ঠান্ডা লাগা বা জ্বর আসা। এই সময়ে ভাইরাসটা জেগে ওঠে জ্বর ঠোসা তৈরি করতে পারে। এইটা দেখেই একজন বুদ্ধিমান হয়তো এটা নাম দিয়েছিল জ্বর ঠোসা।
তারপর অন্য কোন ইনফেকশন হলে বা মানসিক চাপে থাকলে, খুব ক্লান্তি লাগলে বা মেয়েদের মাসিকের সময় এই ভাইরাসটা জেগে উঠে জ্বর ঠোসা তৈরি করতে পারে। এই তথ্যগুলো নিয়েই ছিল আজকের আর্টিকেলটি। ভালো থাকবেন।
No Comment! Be the first one.