বাংলাদেশে বহুবিধ মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা বিরাজমান। এগুলোর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে। শের লভ্য প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের খনিজ সম্পদের জমপক্ষে ২৫৭ ২৫% হওয়া প্রয়োজন।
কৃষির আধুনিকীকরণ: বাংলাদেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ। তাই কৃষিব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা উচিত। উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ঔষধ, কৃষি উপকরণাদির যোগান বৃদ্ধি, সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, কৃষি পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি, কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হলে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
শিল্পায়নঃ জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষির পাশাপাশি শিল্প কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন। শিল্পকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। কৃষিজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি বা কৃষিজাত কাঁচামালের সদ্ব্যবহার করতে হলে শিল্পোন্নয়ন জরুরি। বৃহদায়তন শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসার ইত্যাদি পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে দেশের অবস্থার পরিবর্তন আনা যায়।
মূলধন গঠন: বর্তমানকালে শিল্প ও কৃষি উন্নয়ন মূলধন যোগানের উপর নির্ভরশীল। আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। জনসাধারণের তাই অধিক সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে হবে। ব্যাংকসহ অন্যান্য অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্প্রসারণ ও ব্যাংকসমূহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উপরও মূলধন গঠন নির্ভর করে।
প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারঃ বাংলাদেশের যে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তার উপযুক্ত ও সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের জলবিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণ: দ্রুত উন্নয়নের স্বার্থে অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। রাস্তাঘাট, ব্রীজ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ব্যাংক, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের প্রয়োজন। রয়েছে। তেমনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা সম্প্রসারণ করে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী উন্নয়নের অনুকূলে আনতে হবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে।
শিক্ষার বিস্তার: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির জন্য সার্বজনীন শিক্ষা ও গণশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে কারিগরী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আধুনিক প্রযুক্তি সমাজের সর্বস্তরে পৌছে দিতে কারিগরী ও প্রোকৌশলগত শিক্ষা বিস্তার একান্ত প্রয়োজন।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি: দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা দূর করতে হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রযুক্তিগত উত্তরণ এজন্য আবশ্যক। স্ব-উদ্যোগে কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে একদিকে গ্রামাঞ্চলে যেমন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে তুলতে হবে, তেমনি মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু, ফুল ও ফল চাষের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সম্প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে।
বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনয়ন: বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ক্ষেত্রে যে ঘাটতি বা ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করে তা দূরীকরণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রয়োজন এবং মুষ্টিমেয় কয়েকটি দ্রব্যের রপ্তানীর বদলে অধিক সংখ্যক দ্রব্যের রপ্তানী উৎসাহিত করতে হবে। একই সংগে আমদানি কমাতে হবে।
বৈদেশিক সাহায্যের উপযুক্ত ব্যবহারঃ বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা স্বাধীনতাপূর্ব ও উত্তর উভয় কালেই লক্ষ্যনীয়। বিপুল পরিমাণে প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্য। ঋণের সুষ্ঠু ও উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারলে দেশে সমৃদ্ধি লাভ হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব হবে।
সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন: বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি তথা প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি, আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং মানসম্পদের উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরতা অর্জন আমাদের পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
মুদ্রাস্ফীতি রোধ: বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির হারের তুলনায় মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির হার বেশি থাকায় মুদ্রাস্ফীতি জনজীবনকে বিপন্ন করে তোলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি অনেকটা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। জনস্বার্থে এ প্রয়াস অব্যাহত রাখা আবশ্যক।
দারিদ্রদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম: অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হতে হবে দারিদ্র্য বিমোচনকেন্দ্রিক। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেদ করার লক্ষ্যে সঞ্চয় বৃদ্ধি, উৎপাদনশীল খাতে বৈদেশিক মূলধন ব্যবহার, অধিক উৎপাদন প্রকৃতি ব্যবস্থা নিতে হবে। অনুরূপভাবে দারিদ্রদ্র্য বিমোচন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজের বিত্তহীনদের জন্য বিশেষ উন্নয়ন কর্মসূচি নিতে হবে, যাতে তাদের ভাগ্যোন্নয়নের অন্তরায় অপসৃত হয়।
No Comment! Be the first one.