কারো প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, শুরুতেই আপনাকে তার নাম মনে রাখতে হবে। তাহলে আপনি দেখবেন, কারো সাথে আপনার ব্যাংকে বিমানে বা বিয়ের অনুষ্টানে আকস্মিক পরিচয় হলো। পরবর্তীতে অন্য কোথাও তার নিকট পুনরায় দেখা হলো আপনি যদি হাসিমুখে তার দিকে এড়িয়ে যান, আর তার নাম উল্লেখপূর্বক সম্বোধন করে তাকে স্বাগত জানান, নিঃসন্দেহে আপনার এ আচরণে সে অভিভূত হবে, তার অন্তরে আপনার প্রতি হৃদ্যতা ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হবে।
আপনি কারো নাম মনে রাখলে সে বুঝবে, আপনার নিকট তার মূল্য আছে। ছাত্রদের নাম মুখস্ত রাখেন কিংবা মুখস্থ রাখেন না, এমন দুই শিক্ষকের মাঝে পার্থক্য সুস্পষ্ট। ছাত্রকে হে ছাত্র! দাঁড়াও না বলে হে অমুক নাম বলে দাঁড়াও বলে সম্মোধন করার অনেক বেশি কার্যকর ও ক্রিয়াশীল। আপনি যদি মোবাইল কল রিসিভ করে বলেন কে? অথবা বলেন, হ্যাঁলো! অন্য একজন রিসিভ করেই স্বাগত জানিয়ে বলেন, হে খালিদ! তোমাকে স্বাগতম। বলুন, কোনটি আপনার কাছে বেশি ভালো লাগবে? নিশ্চয়ই তার মুখে আপনার নাম শুনতে পেয়ে আপনার অন্তরে ভালোলাগার এক কোমল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়বে।
একবার কোনো সেমিনারে আলোচনার পর তরুণ ভাইয়েরা আমাকে ধন্যবাদ জানাতে ও মোসাফাহা করতে ভিড় জমায়। আমি তাদেরকে সবসময় বলে থাকি, আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজিবী করুন! হে ভাই! আপনার মূল্যবান নামটি জানতে পারি? তাদের প্রতি আমার এই তাৎপর্য প্রকাশে তারা প্রত্যেকে খুশি হয় এবং আনন্দচিত্তে উত্তর দেয়, আমি আপনার ভাই যিয়াদ, আমি আপনার বেটা ইয়াসির। একবার কুশল বিনিময়ের পর সকলে বিদায় নিলো। তাদের একজন কোনো বিষয়ে জানার জন্য পুনরায় এলে আমি তাকে বললাম, দীর্ঘজিবী হও, হে খালিদ। সে অবাক হয়ে হাসিমুখে বলল, মাশআল্লাহ! আপনি আমার নাম মনে রেখেছেন!
তারপর সেনা কর্মকর্তাগণ তাদের ইউনিফরমে বুকের ওপর ছোট ফলক ব্যবহার করে থাকেন। তাতে তাদের নাম লেখা থাকে। আমি একবার এক সেনানিবাসে স্বরান করেছিলাম। বয়ানের পর অনেকেই আমার সাথে সৌজন্য দেখা অন্যদের ভীড়ের কারণে সে দ্বিধায় ভগছিল। হলো, আমাকে সালাম দিতে চাচ্ছে। আমি দ্রুত নামফলকে তার নাম দেখে নিলাম। তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, স্বাগতম হে অমুক! মুহূর্তেই তার চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। আশ্চর্য হয়ে সে মোসাফাহার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাসি মুখে বলল, আপনি আমার নাম জানলেন কী করে?! – আমি বললাম ভাই! যাদেরকে ভালোবাসি, তাদের নাম নিঃসন্দেহে জানতে ৭ হবে। আমার এ আচরণ তার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে।
কারণ, অনেকেই তার নাম অন্য কেউ মনে রাখলে খুশী হয় এবং মনে মনে কামনা করে, যদি আমিও অন্যদের নাম মনে রাখতে পারতাম! টি এটা ঠিক অন্যের নাম মনে রাখতে না পারার পেছনে অনেক কারণ থাকে। – উল্লেখযোগ্য একটি হলো, কারো সাথে সাক্ষাতের সময় তাকে গুরুত্ব না দেয়া। -আরেকটি হলো, কারো সাথে পরিচিত হওয়ার সময় অন্য মনস্ক থাকা, নাম শোনার সময় মনোযোগ না দেয়া। সাক্ষাতকারীর প্রতি আপনার মনোভাবও – এক্ষেত্রে বিবেচ্য। আপনি ধারণা করেন, তার নিকট আপনার ভবিষত্যে আর কোন দিন দেখা হবে না।
এমনিভাবে তার নাম মনে রাখার প্রয়োজনও বোধ করেন না। সাক্ষাতকারী সাদাসিধা মানুষ। তার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার আগ্রহ আপনার নেই বা প্রথম সাক্ষাতে আপনি তার নাম মনোযোগ দিয়ে শোনেননি, এখন পুণরায় জিজ্ঞেস করতেও সঙ্কোচবোধ করেন। এসব কারণেই অন্যদের নাম স্মরণ থাকে না। নাম মনে রাখার বিভিন্ন কৌশল আছে তার মধ্যে একটি হলো, নাম মনে রাখার তা স্মরণ রাখা এবং এ কথা ভাবা, কয়েক মিনিট পর আমাকে নামটি জিজ্ঞেস করা হবে। আরেকটি হলো, কারো নাম শোনার সময় তার চেহারার প্রতি মনোযোগ সহকারে লক্ষ করা।
যদি আপনি কারে সাথে কথা বলেন তাহলে আপনি তার অঙ্গভঙ্গি, কথনভঙ্গি হাসার ধরণ ভালোভাবে খেয়াল করুন, যেন তা স্মৃতিপটে সংরক্ষিত থাকে। পাশাপাশি কথার ফাঁকে ফাঁকে বারবার তাকে নাম ধরে সম্বোধন করুন। আপনি এভাবে বলুন, হে অমুক! ঠিক তো? হে অমুক! আপনি নিজে শুনেছেন? হে অমুক! আপনি আমার সাথে একমত? বারবার পুনরাবৃত্তি করুন। আপনি কাউকে নাম উল্লেখপূর্বক সম্বোধন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তা’য়ালা নবীদেরকে তাদের নাম ধরেই সম্বোধন করেন: يَا إِبْرَاهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا হে ইবরাহীম।
আপনি এ বিষয়টি এড়িয়ে চলুন। (সূরা হুদ: ৭৬) مِنْ أَهْلِكَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ হে নূহ! সে তোমার পরিবারের অন্তর্ভূক্ত নয়। (সূরা হুদ: ৪৬) الْأَرْضِ فِي إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً دَاوُودُيَا হে দাউদ! আপনি তোমার জমীনে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছি। (সাদ: ২৬) মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, হে ইবরাহিম! আপনি এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে দিন। হে নূহ! সে আপনার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়। হে দাউদ! আমি আপনাকে যমিনে খলিফা বানিয়ে পাঠিয়েছি।
সংক্ষেপে :
সর্বময় নাম মনে রাখতে শিখুন; নাম ধরে ডাকার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে। আমার গুরুত্ব আছে, সে কথা বুঝান, আমি আপনাকে ভালোবাসি।
No Comment! Be the first one.