কার্ডিয়াক এরেস্ট বা হার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া এটি খুবই গুরুতর অবস্থা, যা দ্রুত চিকিৎসা না হলে প্রাণঘাতী হতে পারে। এজন্য যদি কারো সামনে এই ধরনের ঘটনা ঘটে যায়, তখন তাকে কি করতে হবে, তা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই আর্টিকেলটিতে কার্ডিয়াক এরেস্টের সময়ে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন
এ সময়ে প্রথম পদক্ষেপটি হলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। অর্থাৎ এই সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা বুঝতে হবে – তিনি কি জ্ঞানহীন? তার শ্বাস-প্রশ্বাস কি চলছে? যদি আক্রান্ত ব্যক্তিটি জ্ঞানহীন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয়, তখন পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করুন। যদি তিনি সাড়া না দেন এবং শ্বাস নিতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই দ্রুত জরুরি সেবা ডাকুন। তাছাড়া এই মুহূর্তটি খুবই মূল্যবান, তাই দেরি না করে অবিলম্বে সিপিআর (CPR) দেওয়া শুরু করা উচিত। অর্থাৎ সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি একটি মূল্যবান জীবন বাঁচাতে পারেন।
জরুরি সেবা ডাকুন
এ সময়ে আপনি যদি নিশ্চিত হন যে আক্রান্ত ব্যক্তির কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়েছে, তাহলে অবশ্যই জরুরি সেবা সার্ভিস এ কল করতে হবে। এজন্য ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে তাদের জানিয়ে দিন যে পরিস্থিতি কতটা গুরুতর।
এর পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, অবস্থা এবং জ্ঞানহীনতার তথ্য সরবরাহ করতে থাকুন। এ সময় সতর্ক থাকতে হবে যে জরুরি সেবা ডাকতে দেরি করা যাবে না, কারণ জীবন মরণ পরিস্থিতিতে দ্রুত সাহায্য পাওয়া খুবই দরকার।
জরুরী সেবায় কল করার পর যথাসম্ভব শিথিল থাকুন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন। জরুরী সেবা আসা পর্যন্ত আপনি সিপিআর দেওয়া শুরু করুন। সিপিআর দিতে বিলম্ব করবেন না, কারণ আপনার দ্রুত পদক্ষেপ বাঁচাতে পারে একজনের জীবন।
সিপিআর কিভাবে দিবেন?
যদি দেখেন যে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে না, তাহলে সিপিআর দেওয়া শুরু করবেন। এই পদ্ধতিতে হার্ট আবার স্বাভাবিকভাবে চলতে শুরু করে। কিভাবে সিপিআর দিতে হয় এজন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
- এজন্য অবশ্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমতল স্থানে উপর করে রাখুন।
- তারপর হাতের প্যাল্মের নিচের অংশটি আক্রান্ত ব্যক্তির বুকে রাখুন এবং শক্তভাবে চাপ দিন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন যে প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার চাপ দিতে হবে।
- চাপ দেওয়ার পর সতর্ক থাকবেন যে বুকটি সম্পূর্ণভাবে উঠতে দিতে হবে।
- আপনি যদি প্রশিক্ষিত হন তাহলে ৩০ বার চাপ দেওয়ার পরে, রোগীর মুখে দুইবার শ্বাস দিতে পারেন।
ডিফিব্রিলেটর ব্যবহার
যদি আপনার কাছাকাছি কোন ডিফিব্রিলেটর (AED) দেখতে পান, তাহলে অবশ্যই দ্রুত ব্যবহার করবেন। কারণ এটি হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারের নির্দেশনা খুবই সহজ এবং স্পষ্ট। এজন্য যন্ত্রটি চালু করার পর, এটি আপনার কাছে কিছু নির্দেশনা দেবে, সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করুন এবং প্যাডগুলো আক্রান্ত ব্যক্তির বুকে সঠিকভাবে স্থাপন করুন।
ডিফিব্রিলেটরের জন্য অপেক্ষা না করে, আপনি সিপিআর চালিয়ে যাবেন কারণ যতক্ষণ না চিকিৎসা কর্মী এসে পৌঁছায়। সিপিআর এবং AED এর মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এগুলো অনেক সাহায্য করতে পারে। তাই এ সময় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়াই জরুরি।
প্রথম চিকিৎসা প্রদান
এ সময় যতক্ষণ না পেশাদার কোন চিকিৎসা কর্মী এসে পৌঁছায়, ততক্ষণ সিপিআর চালিয়ে যাবেন এবং আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস-প্রশ্বাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে থাকবেন। এজন্য অবশ্যই সিপিআর চালিয়ে যাবেন, যতক্ষণ না তিনি শ্বাস নিতে শুরু করেন বা সহায়তা আছে।
যদি আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে শুরু করে, তাহলে তাকে পার্শ্বমুখী অবস্থানে রাখবেন। কারণ এটি শ্বাস নিতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালীর নিরাপত্তা ও নিশ্চিত করে। চিকিৎসক আসা পর্যন্ত তার দিকে নজর রাখুন। অবশ্যই এ সময় কোন ভাবে তাকে নাড়া দিবেন না এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করবেন।
শেষ কথা
কার্ডিয়াক এরেস্ট এ জীবন মরণ পরিস্থিতি ক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি আমাদের জন্য। তাই এই পরিস্থিতিতে সচেতনতা এবং প্রস্তুতি থাকলে অনেকের জীবন বাঁচানো সম্ভব। আমাদের উচিত সিপিআর প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং জরুরি পদক্ষেপ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা।
সিপিআর দেওয়া একই চ্যালেঞ্জিং কাজ, কিন্তু সঠিক প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে। শুধু তাই নয় অনেক সংস্থা এবং হাসপাতাল সিপিআর প্রশিক্ষণ প্রদান করে, যা আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। সুতরাং আপনি যদি একটু সতর্ক হন, তাহলে অবশ্যই আপনার এই সতর্কতার কারণে অনেক জীবন রক্ষা করতে পারবেন।
No Comment! Be the first one.