আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়েরা, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে – এই খবরটি আজ প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালির হৃদয়ে নতুন আশার সঞ্চার করছে। এটি শুধুমাত্র একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, বরং আমাদের সংগ্রামের, পরিশ্রমের ও আত্মত্যাগের বাস্তব প্রতিফলন।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ECOSOC) ২০২১ সালেই জানিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করেছে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এই তিনটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অগ্রসর। একটি দেশের উন্নয়নশীল মর্যাদা পেতে হলে মাথাপিছু আয় হতে হয় অন্তত $১,২২২। বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যেই তা অতিক্রম করেছে। এছাড়া, মানবসম্পদ সূচকে যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে তা জাতিসংঘের হিসাবেই প্রমাণিত।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মেগা প্রকল্পের অবদান
বাংলাদেশের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ৬.৫%–৭% হারে চলেছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম উচ্চ। বিদেশি রেমিট্যান্স, তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং কৃষি খাত অর্থনীতির ভিত্তি শক্ত করেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ একাধিক মেগা প্রকল্প দেশের অবকাঠামোতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এই উন্নয়নের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকাচ্ছেন।
সামাজিক সূচকে দৃশ্যমান অগ্রগতি
নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন এখন দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেল। ২০০০ সালে যেখানে মাধ্যমিকে মেয়েদের উপস্থিতি ৪০% ছিল, এখন তা ৭০%-এর উপরে। শিশু মৃত্যুহার, মাতৃমৃত্যুহার, এবং দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসাও পেয়েছে। এসব উন্নয়ন আমাদের ‘মানব উন্নয়ন সূচকে’ উপরে তুলে এনেছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনা
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত ভিশন ২০২৫ এবং ভিশন ২০২৬ বাংলাদেশকে ডিজিটাল ও উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, গ্রামকে শহরে রূপান্তরের মত কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে সুচারুভাবে। তিনি বারবার বলেছেন, আমরা কারও কাছে হাত পাতবো না, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।
২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ আর কোনো আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এলডিসি বিশেষ সুবিধা পাবে না। এই মর্যাদা অর্জন একদিকে যেমন গৌরবের, অন্যদিকে এটি আমাদের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জও। রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, আর্থিক সাপোর্ট কমবে। তাই সরকার এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষা, প্রযুক্তি, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান খাতে টেকসই কৌশল তৈরি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, IMF সবাই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যোগ করার ঘোষণা দিয়ে প্রশংসা করেছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এই অর্জন সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। ভারতের NDTV থেকে শুরু করে ব্রিটেনের BBC পর্যন্ত এই খবর প্রকাশ করেছে গর্বের সঙ্গে।
জনগণের অনুভূতি ও আত্মবিশ্বাস
রাজশাহীর কৃষক লাল মিয়া বলেন, আগে শুধু স্বপ্ন দেখতাম, এখন সেই স্বপ্ন হাতের নাগালে। একজন তরুণ শিক্ষার্থী জানায়, আমরা এখন গর্ব করে বলতে পারি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এটি শুধু একটি ঘোষণা নয়, এটি দেশের প্রতিটি মানুষের সম্মিলিত পরিশ্রমের ফসল।
ভবিষ্যতের করণীয় ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
২০২৬ সালের পরে আমরা এলডিসির কিছু বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা হারাবো। কিন্তু আমরা যদি দক্ষতা, প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং শিল্প খাতে জোর দেই, তাহলে আমরা এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো। SDG (Sustainable Development Goals) এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মধ্য দিয়েই আমাদের অগ্রগতি টিকিয়ে রাখতে হবে।
আমার শেষ কথা
২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই বাক্যটি আমাদের জন্য শুধুই একটি ঘোষণা নয়। এটি আমাদের জাতীয় গর্ব, সম্মান ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এখন সময়, সেই সম্মান রক্ষা করে আরও এগিয়ে যাওয়া। আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে লিখে জানান । ধন্যবাদ।
100 টাকার মোবাইল ঘড়ি দাম। বিস্তারিত জানতে এইখানে যান।
