কিছু কিছু লোক আছে তারা সর্বময় ভাবে, মানুষের স্বভাব তেমনই অসম্ভব, যেমন অসম্ভব মানুষের গোত্র-বর্ণের পরিবর্তন। এজন্য জ্ঞানীগণ বলেন, মানসিকতা পরিবর্তন করা কাপড় পরিবর্তনের চেয়েও সহজ। প্রথমে বুঝতে হবে, আমাদের মানসিকতা ও অভ্যাস পড়ে যাওয়া দুধের মত নয়, তা একত্রিত করা যায় না। স্বভাব চরিত্রের বাগডোর আমাদের হাতেই নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরা নিজেদের অভ্যাস ও মানসিকতা বদলে ফেলতে পারি; আমরা বরং বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করে মানুষের স্বভাব নয়, তাদের চিন্তা-চেতনাও পরিবর্তন করা সম্ভব।
উক্ত প্রসঙ্গে ইবনে হাযম (রহ.) তার তাওকুল হামামাহ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, স্পেনের এক বিশাল ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিল। একই শহরে আরো চারজন ব্যবসায়ীর সাথে তার প্রতিযোগীতা ছিল। ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তারা চারজন তার প্রতি হিংশার বশবর্তী হয়ে একপর্যায়ে চার ব্যবসায়ী মিলে তাকে চরম শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
একদিন খুব সকালে সেই ব্যবসায়ী তার দোকানে ব্যবহার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। তাদের পরনে ছিল সাদা জুব্বা, মাথায় সাদা পাগড়ি। পথিমধ্যে সেই চারজনের একজনের সাথে তার সাক্ষাৎ হলো। সে তার নিকট সালাম বিনিময় করে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার হলুদ পাগড়িটা অনেক চমৎকার!
তখন ব্যবসায়ী বলল, আরো! তুমি কী অন্ধ হয়ে গেছো? সাদা পাগড়িকে হলুদ পাগড়ি বলছো কেন? লোকটি বলল, আপনি সম্ভবত ভুল করেছেন। পাগড়িটি হলুদ। তবে হলুদ হলেও অনেক সুন্দর। ব্যবসায়ী তার নিকট কথা না বাড়িয়ে সামনে চলতে থাকে। তখন কিছু দূর না যেতেই চারজনের আরেকজন এসে সালাম দিলো। পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, বাহ। আপনি আজ চমৎকার পোশাক পড়েছেন।
এ সবুজ পাগড়িতে আপনাকে বেশ মানিয়েছে। ব্যবসায়ী তখন বলল, আপনি সম্ভবত ভুল দেখছেন। আমার পাগড়িটি সাদা রঙের। সে বলল, আপনি কী বলেন? এটা দেখছি সবুজ রঙের যা বেটা অন্ধ, স্পষ্ট রঙটাও দেখিস না? ব্যবসায়ী মনে মনে বলল, এরপর সে সামনে চলতে শুরু করলো, কিছুক্ষণ পর পর পাগড়ির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবেন, পাগড়ি সাদাই দেখছি! তারা এসব বলার মানে কী?
একপর্যায়ে সে গিয়ে দোকানে বসেন। কিছুক্ষণ পর তাদের তৃতীয়জন এসে বলল, আজকের পোশাকে আপনাকে বেশ মানিয়েছে। নীল পাগড়িটা অতুলনীয়। ব্যবসায়ী তখন নিজের পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ভাই! আমার পাগড়ির রঙ সাদা। লোকটি বলল, আপনি ভুল করেছেন। পাগড়ির রঙ নীল। তবে এটা সুন্দর মানিয়েছে আপনাকে। এ নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। ব্যবসায়ী তাকে চিৎকার করে বলল, ভাইজান! আমার পাগড়ির রঙ সাদা।
ঐ ব্যক্তি জোর গলায় বললো না, আপনার পাগড়ির রঙ নীল। তবে দুঃচিন্তা করবেন না, এতে আপনাকে বেশ মানিয়েছে। এ কথা বলে লোকটা চলে যায়। এদিকে সে একা একা বলে চললো, আমার পাগড়ি সাদা। আমার পাগড়ি সাদা। বারবার সে পাগড়িটি নেড়ে-চেড়ে দেখতে শুরু করে। কিছুক্ষণ না যেতেই চতুর্থ সেই ব্যক্তি এসে বলল, মাশা আল্লাহ! এই লাল পাগড়িটি আপনি কোথায় থেকে নিয়েছেন? আরে ভাই! কী বলছেন? আমার পাগড়ি সাদা। না, এটাতো লাল।
এরপর তারা বলল, ব্যবসায়ী তখন চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন, আমার পাগড়ি সাদা। না, আমার পাগড়ি লাল। একটু পরে সে আবার বলল, আমার পাগড়ি সবুজ। না, তাছাড়া এটা নীল। হ্যাঁ, এটা নীল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে হাসতে শুরু করেন, আমার পাগড়ি কালো। না, এটা হলুদ। না, এটা সাদা পাগড়ি। সে হঠাৎ লাফ-ঝাঁপ দিতে আরম্ভ করল আর পাগলের মত উচ্চ স্বরে হাসতে শুরু করে।
ইবনে হাযম (রহ.) বলেন, আমি পরবর্তীতে এই ব্যবসায়ীকে স্পেনের অলি- গলিতে পাগলের মত ঘুরতে দেখেছি। ছোট ছোট বাচ্চারা তাকে দেখলে অনেক পাথর ছুঁড়ে মারত।
একবার ভাবুন। যদি এই চারজন তাদের অসৎ দক্ষতা ও চাতুর্য দিয়ে একজন মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তবে বিবেক-বুদ্ধি বিকৃত করে দিতে পারে তাহলে আপনি কেন পারবেন না ওহীর আলোয় আলোকিত, শাশ্বত ও স্বীকৃত যোগ্যতা আর আচরণ দক্ষতাকে কাজে লাগাতে? কেন পারবেন না? আচরণের উৎকর্ষ সাধন, লেখা পড়া থেকে অর্জিত কুরআন হাদীসের আলো থেকে প্রাপ্ত দক্ষতা ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে জীবন সফল করতে?
আপনাকে মনে রাখতে হবে, জীবনে সুখী হতে হলে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা নৈপুণ্যতার সর্বোত্তম কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে শিখুন।
আপনি যদি বলেন, আমি পারবো না, তাহলে আমি বলব, চেষ্টা করুন। আপনি যদি বলেন, এসব কৌশল আমি জানি না, কীভাবে চেষ্টা করব? আমি বলব, শিখতে শুরু করুন। এরপর ওই পথই আপনাকে সত্যের পথ দেখাবে।
আত্মোন্নয়নের জন্য রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা
রাসূল (সা.) বলেন: إِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ، وَإِنَّمَا الْحِلْمُ بِالتَّحَلُّمِ
সাহসী ব্যক্তি নিজের দক্ষতার উন্নতি সাধনের সাথে সাথে অন্যের দক্ষতা বাড়াতেও সচেষ্ট হয়; বরং কখনো অন্যের যোগ্যতাকেই পাল্টে দেয়।
No Comment! Be the first one.