জীবন চলার পথে এমন কিছু কাজ করে থাকি শুধুমাত্র অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। তা হতে পারে বিয়ে-শাদী ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমরা নিজেদের সব থেকে দামী ও সুন্দর কাপড়টি পরিধান করে থাকি। এই কাজটি আপনি করেন অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য; নিজের জন্য নয়। সাধারণত পোশাক ও বেশভূষার সৌন্দর্যে কেউ আকৃষ্ট হলে আমরা পুলক ও আনন্দবোধ করি। এক্ষেত্রে ড্রয়িং রুম বা অভ্যর্থনা কক্ষের ডেকোরেশেন করার সময় আমরা তার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সচেতন হই।
এটাও আমরা করে থাকি শুধুমাত্র অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে, নিজের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নয়। এর প্রমাণ হলো, আমরা অভ্যর্থনাকক্ষের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যতটা সচেতন, নিজেদের কামরা কিংবা বাচ্চদের গোসলখানার সৌন্দর্য বর্ধনে ততটা নই। বিশেষ করে কোনো বন্ধুকে খাবারের দাওয়াত করলে আপনার স্ত্রী, এমনকি কখনো কখনো আপনি নিজেও খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনোযোগী হয়ে থাকেন। অতিথি যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, খাবারের মানের প্রতি তত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
পরিচিত কেউ আমাদের পোশাক- পরিচ্ছদ বা ঘরের সাজ-সজ্জার প্রশংসা করলে বা খাবার ও রান্নার গুণকীর্তন করলে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হই। নাসায়ীর এক বর্ণনায়, রাসূল (সা.) বলেছেন: কোনো ব্যক্তি চায় যে লোকজন যেন তার কাছে আসে, তাহলে তার উচিত হল মানুষের কাছে যাওয়া। অন্যথায় আপনি মানুষের সাথে কিসের ভিত্তিতে অন্যের কাছে উত্তম আচরণ আশা করেন? পরিচিত কারো পরনে সুন্দর পোশাক দেখতে পেলেন, তার প্রশংসা করুন; তাকে আনন্দ দেয়ার জন্য কিছু কথা বলুন।
সাক্ষাতকারীর পোশাক থেকে আতরের সুঘ্রাণ পেয়েছেন, তার সুরুচির তারিফ করুন। কারো সাথে মতবিনিময় করার সময় তার ভালো দিকগুলো লক্ষ করুন। দ্বিধাহীন চিত্তে তার প্রশংসা করুন। বলুন, মাশাআল্লাহ! কত সুন্দর! আজ তোমাকে বরের মত লাগছে!
কেউ আপনাকে খাবারের দাওয়াত দিয়েছে, খাবারের প্রশংসা করুন। কেননা, কোয়ানি জানেন, দাওয়াতপ্রদানকারীর মা অথবা স্ত্রীকে শুধুমাত্র আপনার জন্য দীর্ঘক্ষণ রান্নাঘরে থাকতে হয়েছে বা অন্তত হোটেল বা রেষ্টুরেন্ট থেকে আনতে পরিশ্রম করতে হয়েছে। তাই তাকে এমন কিছু কথা শোনান, যাতে সে উপলব্ধি করতে পারে, আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সে যেন এ কথা মনে করে, আপনার জন্য তার কষ্ট-ক্লেশ বৃথা যায়নি। কোনো বন্ধুর বাসায় গিয়ে সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র দেখতে পেলেন, অকুণ্ঠচিত্তে আসবাবপত্রের প্রশংসা করুন এবং তার সুরুচির তারিফ করুন।
কোনো সভা বা মজলিসে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন, একজন শ্রোতাদের সম্মুখে কথা বলছেন। কথার যাদুতে তিনি মজলিসকে জমিয়ে তুলেছেন এবং শ্রোতারাও তার কথায় মুগ্ধ। আপনি তার প্রশংসা করুন। মজলিস শেষে ওঠার সময় তার হাত ধরে বলুন, মাশাআল্লাহ। আপনার বগ্মিতা অতুলনীয়! আপনার উপস্থিতিতে আজকের সভা সৌন্দর্যম-িত হয়েছে। আর পরীক্ষামূলকভাবে এভাবে বলে দেখুন, সে আপনাকে ভালোবাসতে আরম্ভ করবে। আপনি পিতা-পুত্রের মাঝে কোনো সুন্দর আচরণের বহিঃপ্রকাশ দেখেন।
ছেলেকে পিতার হাতে চুমু খেতে দেখেন বা পিতার জুতা এগিয়ে দিতে দেখেন। ছেলের এ কাজের প্রশংসা করুন। কেউ নতুন পোশাক পরিধান করেছে, তার প্রশংসা করুন। বোনের বাড়িতে গিয়ে তাকে তার সন্তানদের প্রতি যত্নশীল দেখেছেন। এ কাজের জন্য বোনের প্রশংসা করুন। এভাবে অন্যের ভালো দিকগুলোই শুধুমাত্র লক্ষ করুন। আপনি আপনার বন্ধুকে তার সন্তানদের প্রতি যত্ন নিতে দেখেছেন অথবা মেহমানদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে তার অভিনব কোনো কৌশল দেখেছেন।
আপনি বিচক্ষণতার নিকট তার প্রশংসা করুন। আপনার হৃদয়ের অনুভূতিকে প্রকাশ করুন। আপনি কারো সাথে তার গাড়িতে উঠেছেন বা ট্যাক্সি ভাড়া করেন, নিরাপদ-চমৎকার ড্রাইভিংয়ের কারণে ড্রাইভারের প্রশংসা করুন। যদি ধারণা করা হয়, কিছু কিছু লোক বলবে, এসব শুধুমাত্র লৌকিকতা। তবে বাস্তব সত্য কথা হলো, এ লৌকিকতার অসাধারণ প্রভাব রয়েছে। সমাজের ছোট-বড়, নিম্ন-উচ্চ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে আমি নিজে এগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি, প্রয়োগ করেছি অনেক ক্ষেত্রে।
এদের অনেকেই সমাজের অতি উচ্চ স্তরের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত। আমি তাদেরকে আশাতীত প্রভাবিত হতে দেখেছি। প্রভাবিত হবেই না বা কেন? মানুষ যেসব ক্ষেত্রে অন্যের প্রশংসা কামনা করে, স্বভাবতই সেসব ক্ষেত্রে প্রশংসা লাভ করলে অত্যন্ত প্রভাবিত হতে হয়।
যদি নব বিবাহিত কোনো ব্যক্তির সাথে বিয়ের এক সপ্তাহ পর আপনার দেখা হয়, ১৮ জবের সার্টিফিকেট অর্জনকারী কোনো ব্যক্তির সাথে আপনার দেখা হলো, আপনার কোনো প্রতিবেশী নতুন বাড়ি নির্মাণ করল, এরা সকলেই আপনার প্রশংসা অপেক্ষা করছে। আপনি তাদের সাথে উপযুক্ত আচরণ করুন। আমার চাচাতো ভাই আব্দুল মজীদ স্নাতক স্তরে পড়ে। কলেজ-শিক্ষা সমাপনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য সে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে ইচ্ছা করল। এজন্য একবার সকালে আমি তার নিকট মোবাইল যোগাযোগ করলাম ও আমার গাড়ি নিয়ে তার বাড়িতে গেলাম।
শিক্ষাজীবনের নতুন ও স্তরে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে বিধায় তার অন্তরে বিভিন্ন অনুভতি ভিড জমাচ্ছিলো। সে তার নতুন হাজ নিয়ে ভাবছিল। গাড়িতে ওঠার পর আমি তার শরীর হতে সুগন্ধির ঘ্রাণ কাজলাম। মনে হচ্ছিলো, সে আতরের সমস্ত শিশি কাপড়ে ঢেলে দিয়েছে! সহিত আতরের ঝাঁজালো ও সুতীব্র ঘ্রাণে আমার শ্বাস রূদ্ধ হওয়াও উপক্রম ছিল। বুঝতে পারছিলাম, বেচারা পোশাকের সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণের জন্য যথেষ্ট জাকিকতা করছে। আমি শ্বাস গ্রহণের জন্য জানালা খুললাম আর তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম, মাশা-আল্লাহ! বড় চমৎকার মিষ্ট ঘ্রাণ।
আমার ভয় হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর যখন প্রথমবার এই মিষ্ট ঘ্রাণ অনুভব করে সাজারে বলে উঠবেন, তোমার ভর্তি কমপ্লিট। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে এ কথা শুনে সে কী পরিমাণ আনন্দিত হয়েছে। অন্তরে লুকিয়ে রাখা আনন্দ তার পুরো চেহারায় উদ্ভাসিত হচ্ছিলো। সে আমার দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল, ভাই আবু আব্দুর রহমান! আপনাকে চসংখ্য ধন্যবাদ, এটি অনেক দামী আতর। সবসময়ই আমি এ আতরটি যাবহার করি। আর কেউ এর প্রতি আকৃষ্ট হয় না। সে বারবার নিজের কাপড়ের ঘ্রাণ শুঁকে বলতে শুরু করে, নিশ্চয়ই আমার রুচি ও পছন্দ অতি চমৎকার!
এ ঘটনার পর ইতোমধ্যে পনের বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। আব্দুল মজীদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপন করেছে ও কয়েক বছর যাবৎ চাকুরী করছে। সেদিনের ঘটনা এখনো তার স্মরণ আছে। সাক্ষাতে প্রায়ই সে তা স্মরণ করিয়ে দেয়। সম্পর্কের মাধ্যমে প্রভাবিত করা ও ভালোবাসা অর্জন করা অত্যন্ত সহজ। আমরা অধিকাংশ সময় স্বভাবজাত আকর্ষণ দক্ষতা প্রয়োগ করতেও অবহেলা করি। আপনি বিচক্ষণ হোন। অত্যুক্তি হবে না, যদি বলি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী মহা-মানব রাসূল (সা.) মানুষের ভালোবাসা অর্জনে এ সকল দক্ষতা তাছাড়া এর চেয়েও উত্তম দক্ষতা প্রয়োগ করতেন।
আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) ছিলেন মক্কার একজন ত্যাগ করে শূন্য হাতে হিজরত প্রতিতিয়ে গেলেন নিঃস্ব-হতদরিদ্র মুহাজির! মুহাজিরদের অবস্থার দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে রাসূল (সা.) মুহাজির ও আনসারদেরকে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করেন। তাদের মধ্যে যেমন আবদুর রহমান (রা.) হলেন সাদ বিন রাবীয়া (রা.)-এর ভাই। সাহাবায়ে কেরামের নফস ও অন্তর জগত ছিল স্বচ্ছ, হৃদয় ছিল পরিচ্ছন্ন। সাদ (রা.) আবদুর রহমান (রা.)-কে বলেন, ভাই! মদিনাবাসীদের মধ্যে আমি সর্বাপেক্ষা সম্পদশালী।
তাই আমার সম্পদকে সমান দু’ভাগে ভাগ করে আপনি অর্ধেক গ্রহণ করুন, আমার জন্য অর্ধেক বাকি রাখুন। পাশাপাশি আমার দু’স্ত্রীর মধ্যে যাকে ইচ্ছা স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করুন, আমি তালাক দিয়ে দিচ্ছি। বিশিষ্ট সাহাবী আবদুর রহমান (রা.) তার সম্পদ মক্কায় রেখে এসেছেন ও ইতোমধ্যে কাফিররা তা দখল করে নয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি সাদ (রা.)-এর উভয় প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে বলেন, আল্লাহ আপনার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। আপনি দয়া করে আমাকে মদিনার বাজার চিনিয়ে দিন।
সাদ (রা.) তাকে বাজার চিনিয়ে দিলেন। তিনি বাজারে গিয়ে বাকিতে কিছু পণ্য ক্রয় করে তা নগদে বিক্রি করেন। এজন্যে ব্যবসা করার মত মূলধন অর্জিত হলো। আপন জ্ঞান ও ব্যবসায়িক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অল্প দিনেই তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের পর যখন আবদুর রহমান (রা.) রাসূল (সা.)-এর কাছে এলেন, তার শরীরে মহিলাদের দেয়া যাফরানের রঙ শোভা পাচ্ছিলো। তিনি এখন মদিনায় অপরিচিত কেউ নন, তিনি সদ্য বিয়ে করা মদিনার বর! রাসূল (সা.) আত্মার চিকিৎসক এবং বিচক্ষণ ছিলেন।
মানুষের অন্তরকে আকর্ষণ করার জন্য তিনি সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকতেন। আবদুর রহমানের প্রতি দৃষ্টি পড়া মাত্রই তিনি তার অবস্থার পরিবর্তনের দিকে মনোযোগী হলেন। বলেন, কী খবর তোমার? আবদুর রহমান হস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন, হে রাসূল! আমি আনসারী এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসূল (সা.) অবাক হলেন। মনে মনে ভাবলেন, এত দ্রুত সে কীভাবে বিয়ে করতে সক্ষম হলো? এই কিছুদিন পূর্বে সে হিজরত করেছে! এজন্য নবিজী বলেন, স্ত্রীর মোহর কত ছিল? আবদুর রহমান বলেন, খেজুর দানার ওজন পরিমাণ স্বর্ণ!
রসুল (সা.) আবদুর রহমান (রা.)-এর আনন্দকে আরো বৃদ্ধি করতে চাইলেন হলেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও তুমি ওলিমার আয়োজন করো। • রাসূল (সা.) তার ধন-সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকতের দোয়া করেন। ফলে ৭ • তাতে প্রভুত বরকত হলো। আবদুর রহমান (রা.) তার উপার্জণ ও ব্যবসা- বাণিজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলতেন, আমি যদি পাথরও ওঠাতাম, তাতেও স্বর্ণ- আশা করতাম। ৫০ রূপা পাওয়ার • বিশেষ করে রাসূল (সা.) অন্যদের ভালো গুণগুলো তালাশ করতেন। অসহায় ও নিঙ্গোদেরকে তাদের তাৎপর্য উপলব্ধি করাতেন।
তারা এ কথা অনুভব করতো, তিনি তাদের প্রদি মনোযোগী হতেন এবং তাদেরকে ভালোবাসেন। তিনি তাদের -ভূজ কর্মেরও মূল্যায়ন করতেন। কারো সাথে দেখা হলে তার ভালো বিষয়গুলো – উল্লেখ করতেন এবং এর নেক আমলকে অন্যদের সামনে পেশ করতেন। ফলে অন্যরাও অনুরূপ কাজ করতে আগ্রহী হতো। মদিনায় কৃষ্ণবর্ণের এক মুমিনা নারী মসজিদে নববী ঝাড়ু দিতো। রাসূল (সা.) মাঝে মধ্যেই তাকে ঝাড়ু দিতে দেখতেন এবং আগ্রহ নিয়ে দেখে মুগ্ধ হতেন। একবার বেশ কয়েকদিন তাকে দেখতে না পেয়ে রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামেরকে তার সম্পর্কে বলেন।
সাহাবায়ে কেরামগণ জানালেন, হে রাসূল! সে কয়েকদিন পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছে। – রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা আমাকে তার মৃত্যুসংবাদ জানাওনি কেন? তখন সাহাবিগণ মহিলার মৃত্যুর বিষয়টিকে তুচ্ছ মনে করেছিলেন। নাম- পরিচয়হীন একজন নিঃস্ব মহিলা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার মৃত্যুসংবাদ সাথে সাথে রাসূলকে দিতে হবে। সাহাবায়ে কেরামগণ বলেন, সে রাতে মৃত্যুবরণ করেছে। আপনার কষ্ট হবে ভেবে আপনাকে আমরা জাগ্রত করিনি ও রাসূল (সা.) তার জানাযা পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এদিকে সাহাবায়ে কেরাম বুঝতে পারলেন, মানুষের দৃষ্টিতে তুচ্ছ হলেও আল্লাহর দৃষ্টিতে এ মহিলা অত্যন্ত মর্যাদাশীল। তবে তারা ভেবে পাচ্ছিলেন না, রাসূল কীভাবে সমাধিস্থ এ মহিলার জানাযা পড়বেন! রাসূল (সা.) বলেন, আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা.)-কে তার কবরের পাশে নিয়ে গেলেন। রাসূল (সা.) তার কবরকে সামনে → রেখে জানাযা পড়িয়ে বলেন, এ কবরগুলো তার বাসিন্দাদের জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলা। আমার এ জানাযা দ্বারা আল্লাহ তা’য়ালা সেগুলো আলোকিত করেন।
নিঃস্ব একজন মহিলার প্রতি রাসূল (সা.)-এর এই ভালোবাসা ও গুরুত্বের নিংপ্রকাশে সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়জগতে না জানি কী আশ্চর্য অনুভূতি কহিসাবো। রাসূল (সা.)-এর সামান্য এই আচরণে তারা লাভ করেছিলেন ঐ মহিলার ন্যয় আমল বা তার চেয়েও বড় আমলের অনুপ্রেরণা। আমরা এমন এক সমাজে বসবাস করছি, যেখানে এ জাতীয় দক্ষতাকে অনেক ক্ষেত্রেই মূল্যায়ন করা হয় না। অতি সত্যিকার ও অর্থ একদল ব্যক্তি আছে, যারা আপনার নম্র ব্যবহার, কোমল ও উদ্বুদ্ধকর আচরণ ও নিখাঁদ প্রশংসাতেও কোনো রূপ প্রভাবিত হবে না।
কোমল আচরণের বিপরীতে তাদের কাছে আপনি পাবেন রুক্ষ-প্রাণহীন আচরণ, যাতে নেই কোনো স্বাদ, রঙ, সুঘ্রাণ। এদের আচরণে হতাশ হবেন না। আপন উদ্যম বজায় রাখুন। সামনের পথে এগিয়ে যান। এবার একটি মজার বিস্ময়কর ঘটনা শুনুন। আমার পরিচিত এক যুবককে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছে। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও আমন্ত্রিত ছিলেন। সে যাওয়ার পথে মার্কেটের একটি সুগন্ধির দোকানে প্রবেশ করে ভাব দেখালো, খুব দামী কোনো আতর কিনবে।
দোকানদার উপযুক্ত। ক্রেতা পেয়ে দ্রুত স্বাগত জানাতে এগিয়ে গিয়ে তাকে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান আতর দেখাতে শুরু করেন। তিনি মনে করলেন, এসব বৈচিত্রময় সুগন্ধির মধ্য হতে ক্রেতা তার পছন্দমত একটিকে বেছে নেবে। বিভিন্ন ধরনের আতরের স্পর্শ যখন তার পোশাক সুঘ্রাণ ভরে যায়, সে বিক্রেতাকে কৃত্রিম বিনয়ের সাথে বলল, ধন্যবাদ! আমি একটু ভেবে দেখি, এগুলোর মধ্য হতে যদি কোনোটি আমার পছন্দ হয়, আমি আপনার দোকানে ফিরে আসবো। একপর্যায়ে সে দ্রুত অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে চলল, যাতে করে আতরের গন্ধ শেষ হওয়ার পূর্বেই সেখানে উপস্থিত হতে পারে।
খাবার টেবিলে সে তার বন্ধু খালিদের পাশে বসলো। খালিদ তার সুঘ্রাণে আকৃষ্টও হলো না, তার সুরুচি সম্পর্কে কোনো মন্তব্যও করল না। এমনিভাবে যুবক হতবাক হয়ে খলিদকে বলল, তুমি কি কোনো চমৎকার আতরের সুঘ্রাণ পাচ্ছো না? জবাবে খালিদ বললো না, মনে হয় তোমার নাক সর্দির কারণে বন্ধ হয়ে আছে! যদি আমার নাক বন্ধ থাকে তাহলে তোমার ঘামের দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারতাম না।
একটি স্বীকারোক্তি:
একজন মানুষ যতই সফল হোক না কেন? তারপরও সে একজন মানুষ এবং কেউ তার প্রশংসা করলে তা শুনতে সে ভালোবাসে।
No Comment! Be the first one.