অতি শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে, ইসলামের পবিত্র রমজান মাস। এ সময় রোজা পালনকারীদের অনেকেই শুরু থেকেই কিছু শারীরিক জটিলতায় ভোগে। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে এই জটিলতা গুলো কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
যুক্তরাজ্যের শরীরচর্চার প্রশিক্ষক ও পুষ্টিবিদ একজন দম্পতি, রোজা রেখে ব্যায়ামের বিষয়েও দ্য হেলদি রমাদান গাইড একটি বই লিখেছেন। রোজা শুরুতেই শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
পর্যাপ্ত পানি পান করা
অনেকেরই রমজানের প্রথম কয়েকদিন মাথাব্যথা করে, এটি সাধারণত পানি শূন্যতার কারণে হয়ে থাকে বলেছেন, একজন শরীরচর্চার প্রশিক্ষক ও পুষ্টিবিদ। তিনি আরো বলেছেন, স্বাভাবিক সময়ে আমরা যে পরিমাণ পানি পান করে থাকি, রোজার সময় সন্ধ্যা থেকে বোর পর্যন্ত ওই পরিমাণ পানি পান করার লক্ষ্য রাখতে হবে।
অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যেই কিছুক্ষণ পরপর অল্প অল্প পানি পান করা যেতে পারে। এছাড়া আপনি যদি ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানীয় খেতে অভ্যস্ত থাকেন। তাহলেও রোজার প্রথম কয়েকদিন আপনার মাথা ব্যথা হতে পারে। কারণ ক্যাফিনে অভ্যস্ত থাকা ব্যক্তিদের শরীরে ক্যাফিনের ঘাটতি হলে মাথা ব্যাথা করে।
দিনের প্রথম খাবার পুষ্টিকর রাখা
যুক্তরাজ্যের একজন শরীরচর্চা প্রশিক্ষক বলেছেন, রোজার দিনে তিনবারের পরিবর্তে যেহেতু দুইবার খাবার গ্রহণ করা হয়। তাই ওই দুইবারের খাবারে যেন সারাদিনের চালিকাশক্তি দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অনেকে ভোররাতে সেহেরী না খেয়ে রোজা রাখেন।
এক্ষেত্রে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়। ভোর রাতের খাবারের প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার প্রয়োজন। সাথে যদি কিছু সবজি ও ফল থাকে, তাহলে আরো ভালো।
তিনি আরো বলেছেন, যাদের অভ্যাস নেই তাদের জন্য এত সকালে খাওয়া অনেক সময় বেশ কষ্টকর হতে পারে। তবে শরীর দ্রুতই সেই অভ্যাসের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথম কয়েকদিন সেহরি খেতে কষ্ট হলে, শুরুতে অল্প করে খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত চতুর্থ বা পঞ্চম দিনের মধ্যে ব্যক্তির ওই সময় খাবার গ্রহণের অভ্যেস হয়ে যায়।
ইফতারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করা
যেহেতু রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থাকা হয়। তাই অনেকেই মনে করেন সারাদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে ইফতারে প্রচুর খেতে হবে। বিশেষত বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সাথে খাবার সময় এই প্রবণতা বেশি কাজ করে।
কিন্তু ইফতারে আমরা অনেকেই যা খাই, তাতে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সপ্তাহে একদিন যেখানে একটু বেশি খাওয়া হয়, এখানে রমজান মাসে প্রতিদিনই বেশি খাওয়া হয়। তাই সারাদিন না খেয়ে থাকলেও দিনশেষে এই খাওয়া হয় অন্য সময়ের চেয়ে বেশি।
আর তাছাড়া অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ব্যক্তি স্বাভাবিকের থেকে দুর্বল অনুভব করে। এবং পরের দিনে রোজা জন্য উৎসাহী বোধ করে না। এক্ষেত্রে পানি দিয়ে ইফতার শুরু করার পর, খেজুর ও কিছু ফল খাওয়া যেতে পারে।
আর তারপর নামাজ পড়ে, মূল খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ। খাওয়ার সময় নিয়মিত ইফতারের সঙ্গে প্রোটিন কমপ্লেক্স, কার্বোহাইড্রেট ও সবজিও নিশ্চিত করুন। সেখানে থাকতে পারে সুপ, মাছ কিংবা মুরগি মাংসের আইটেম।
খাওয়ার ভারসাম্য বজায় রাখা
কোন দাওয়াতে বা পরিবারের কোন সদস্যের সাথে খেতে বসলে, আইটেম খাওয়া চাপ থাকে। তবে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ হলো, ধীরে খাওয়া শেষ করা এবং এ সময় আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলা।
দাওয়াতে গেলে হোস্ট আপনার প্লেট খালি দেখলে চাপাচাপি করবেই, তাই ধীরে ধীরে খাবার শেষ করলে আরো খাবার নিতে কেউ জোর করবে না।
ব্যায়ামের সময় নির্ধারণ করা
তাছাড়া,অধিকাংশ মানুষই ইফতারের এক বা দুই ঘন্টা আগে ব্যায়াম করতে স্বাচ্ছন্ন বোধ করেন। কারণ সে ক্ষেত্রে ব্যায়াম শেষ হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা খাবার ও পানি খেতে পারেন। তবে এই পদ্ধতি যদি ব্যক্তির রুটিন মাফিক কাজ না করে, তাহলে আলাদা রুটিন করা যেতে পারে।
সে ক্ষেত্রে ওই পুষ্টিবীর নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আগের বছর রোজা রেখে তিনি দুপুরের দিকে ব্যায়াম করতেন। শুরুর দিকে ব্যায়াম কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু শরীর ওই পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে বলেন তার মতে।
শক্তি ও স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দেয়া
দিনের যে সময়ই ব্যায়াম করা হোক না কেন, তা অন্যান্য কাজের সাথে মানিয়ে নেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে ওই পুষ্টিবিদ আরো বলেছেন, রোজার সময়ে ব্যায়ামে তীব্রতা কমিয়ে ফেলা, বরং এ মাসে শরীরের শক্তি, ও স্থিতিশীলতার বৃদ্ধি, নাড়াচাড়া ও গতিশীলতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত।
তারমধ্যে এ মাসে কঠিন ব্যায়ামের রুটিন না করে, হাটা বা হালকা দৌড়ানোর মতো ব্যায়াম করা বেশি কাজও কর। এরকম আরো স্বাস্থ্য টিপস বিষয়ে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
No Comment! Be the first one.