ইসলামিক ক্যালেন্ডার এর পবিত্রতম মাস রমজান। এ মাসের আয়োজনে একটা বড় অংশ থাকে রোজা শুরুর আগে সেহেরী এবং সমাপ্তির জন্য ইফতার খেয়ে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের খাবার ক্ষুধা, ও পিপাসা নিবারণে এবং মাসজুড়ে সচল থাকতে সাহায্য করতে পারে?
সেহেরীতে কোন ধরনের খাবার?
তুরস্কের একজন পুষ্টিবিদ বলেছেন, রমজান মাসে দিনভর শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। এবং যথেষ্ট পানি পান করতে হবে। তিনি মূলত পুষ্টিকর কিন্তু ভারী না, আবার পেট ভরবে এমন খাবারের গুরুত্ব দেন।
যেমন দুধে তৈরি খাবার, ডিম, শসা টমেটোর সালাত, ফলমূল, সুপ, সবজি যেটা অলিভ অয়েল বা কম তেলে রান্না করা এমন বিভিন্ন খাবার। আবার মাছ-মাংস এবং সবজির পাশাপাশি দই চিড়ার মত আবারেও গুরুত্ব দেন অনেক পুষ্টিবিদ।
দিনের পানি চাহিদা পূরণে ইফতারের সময় থেকে সেহেরি পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা পরামর্শ প্রায় সবাই দিয়ে থাকেন। এছাড়া আর একজন পুষ্টিবিদের মতে, শাকসবজি, রুটি ইত্যাদি এই জাতীয় খাবার সেহরির জন্য খুব ভালো।
এছাড়া, আরেকটি বিবেচনা বিষয় হলো যেসব খাবারে ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এতে বর পেট খাওয়ার অনুভূতি ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে, মটরশুঁটি, সিম, ছোলা, ডাল জাতীয় শস্য, খোসাসহ রান্না করা আলু বা শেকর জাতীয় সবজি, বাদাম এবং ফলমূল। তাছাড়া বাদামি চালেও আঁশ থাকে।
তবে পর্যাপ্ত পানি পান করা পাশাপাশি লবণযুক্ত খাবারের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক করেন এই পুষ্টিবিদ। কারণ লবণযুক্ত খাবার পানি তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া সেহেরীতে ক্যাপিন আছে এমন পানিও পরিহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
ইফতারে কি খাবার?
রোজা ভাঙ্গার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট পরিমাণে তরল পদার্থের পাশাপাশি শরীরে শক্তি পেতে খেজুরের মতো খাবারও গুরুত্বপূর্ণ। যাতে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে। এটি মুসলমানদের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এছাড়া ডাল সিম বা মটরশুঁটির মতো বীচ, সবজি দিয়ে তৈরি করা সুপ ও উৎকৃষ্ট হিসেবে উল্লেখ করেন এই তুরস্কের পুষ্টিবিদ।
কারণ এতে করে দেহে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায় অনেক সহজেই। তিনি আরো বলেছেন, সারাদিন না খেয়ে থাকার পর খুব ভারী খাবার দিয়ে দিন শুরু করলে, তা হয়তো আপনাকে ক্লান্ত, অলস, ও অসুস্থ বোধ করাতে পারে।
দেশ ও সংস্কৃতি বেঁধে ইফতারের খাবার এর ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশের ভাজাপোড়া খাবার বেশ প্রচলিত। যেটা সাধারণত খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয় না। বিশেষত তেলটা যদি ভালো না হয়। আপনার কথা বিবেচনা করে ভাজাপোড়া একদমই বাদ দিয়ে দেবেন, এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তাই এসব খাবার পুরোপুরি বাদ না দিলেও, পরিনীতি বজায় রেখে খাবার কথা বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
ওজন বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে মিষ্টি, বা মাত্রা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। কিছু পুষ্টিবিদ একবারে বেশি খাওয়ার পরিবর্তে, ইফতারের খাবার কে দুই ভাগে ভাগ করার পরামর্শ দেন। কারণ তাতে করে রক্তের গ্লুকোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বদহজমের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন পুষ্টিবিদ এবং ডায়েট স্পেশালিস্ট এর মতে, ইফতারিতে সপ্তাহে একদিন বেশি খাওয়া হয়ে গেলে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সেটা যেন প্রতিদিন না হয়।
রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
তাছাড়া, রোজা রাখার স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণেই ইদানিং ফাস্টিং ওজন কমানোর জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে, এ ফাস্টিং কি খাবেন তার পরিবর্তে কখন খাবেন সেদিকে নজর দেয়। যার মধ্যে প্রতিদিন একটা সময় করে না খেয়ে থাকতে হয়। এর মূল দিকটা হলো, যখন শরীরে জমা থাকার চিনি সব ব্যবহার হয়ে যায়, এরপর চর্বি গলতে শুরু করে। যাতে করে ওজন কমে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে এতে করে রক্তচাপ, ও কোলেস্টেরল কমা, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রমজান মাসের রোজা রাখলে তা ফুসফুস, ও স্তন ক্যান্সারের মতো ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমায়।
আমেরিকার একই সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রমজান মাসে রোজা রাখলে হজমের প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব রাখতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে, রোজা রাখা শরীরের জন্য ভালো।
তবে রমজান মাসের বাইরে একটানা রোজা রাখাটা বেশি ভালো হবে না। কারণ একটা পর্যায়ে শরীর চর্বি গলি হতে আর শক্তিতে রূপান্তরিত করবে না। তখন এটি শক্তির জন্য নির্ভর করবে মাংসপেশির উপর। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। কারণ আপনার শরীর তখন ক্ষুধায় ভুগবে, বলছিলেন তিনি।
আবার আরেকজন পুষ্টিবিদের মতে, রমজান মাসের সাধারণত এক কেজির মত ওজন কমতে পারে। কিন্তু ইফতারের বেশি খাওয়া হলে, উল্টো বেড়েও যেতে পারে। ইফতারের টেবিলে হরেক রকম খাবার থাকলে, বেশি খাবার প্রবণতা ও তৈরি হতে পারে।
তবে তার মতে সামনে যা থাকবে সবই খাবার প্রয়োজন নেই। তাই বেছে বেছে খাবার নিন। এবং ধীরে ধীরে খান। সেহরি বা ইফতার যেকোনো ক্ষেত্রে অন্তত তেমন খাবার নিশ্চিত করুন, যেন শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়।
No Comment! Be the first one.