সকল বন্ধ দরজা খুলতে যেমন একটি চাবি প্রয়োজন হয়; তেমনিভাবে মানুষের হৃদয় জয়েরও একটি চাবি আছে; তাহলো ব্যক্তির স্বভাব সম্পর্কে অবগত হওয়া। মানুষের সমস্যার সমাধান, তাদের দ্বন্দ্ব নিরসন, তাদের কাছ থেকে স্বার্থ উদ্ধার ও তাদের অনিষ্টতা থেকে নিজেকে বাঁচানোর সকল পদ্ধতি আপনার সামনে দিবালোকের ন্যয় স্পষ্ট হয়ে উঠবে, যখন আপনি তাদের স্বভাব সম্পর্কে অবগত হবেন। উদাহরণস্বরূপ আপনি দেখবেন, কোনো যুবক তাঁর পিতা মাতার সাথে মনোমালিন্য বা বিরোধ দেখা দিলো এবং এক পর্যায়ে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে বাবা ছেলেকে বাড়ী থেকে বের করলো।
পরবর্তীতে ছেলে কয়েকবার বাড়ী ফেরার চেষ্টা করলেও বাবা তার জিদ থেকে এক চুলও হটবার নয়। তখন মীমাংসার উদ্দেশ্যে আপনি ছেলের বাবার কাছে গেলেন ও আরম্ভে তাকে শরীয়তের কিছু বিধি-বিধান শোনালেন। আত্মীয়তা ছিন্ন করার পাপ সম্পর্কেও তাকে সতর্ক করেন। আপনার এ প্রচেষ্টায় ভদ্রলোকের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি। সে তখনও ক্রোধে অগ্নিশর্মা। এমনিভাবে আপনি কিছু সময় কথা বলে বুঝতে পেরেছেন, যুবকটির পিতা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল ও আবেগপ্রবণ।
এ পর্যায়ে আপনি তাকে বলেন, জনাব। নিজের সন্তানের প্রতি কি আপনার এতটুকু মমতাবোধ নেই! কোথাও তার একটু মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। খোলা আকাশই তার গায়ের চাঁদর। এভাবেই মাটির বিছানায় শুয়ে কাটছে তার দিন-রাত। আপনি নিশ্চিন্তে খাওয়া-দাওয়া করেন, বেচারা সকাল-সন্ধ্যা ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ঘুরছে। যখন আপনি রুটির টুকরা মুখে দেন, তাকে কি একবারও মনে পড়ে না? সূর্যের কঠিন তাপে অস্থির হয়ে পড়া ছেলেটার প্রতি একবারও কি আপনার দয়া হয় না?
সেই স্মৃতিগুলো কি আপনার মনে পড়ে না যখন সে ছোট্ট ছিল, আপনি তাকে কোলে তুলে নিতেন, আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরতেন, তার ঘ্রাণ নিতেন চুমু খেতেন? আপনি বেঁচে থাকতে আপনার সন্তান পথে পথে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে বেড়াবে, এটা কি আপনার কাছে ভালো লাগবে? যদি আপনার দরদভরা এই কথাগুলো বাবার স্নেহের সাগরে ঢেউ তুলবে। বাবা তখন সন্তানকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবে।
যদি তার বাবা কৃপণ স্বভাবের হয় তাহলে তাকে বলুন, জনাব। সময়। সতর্ক হোন। নিজেকে জটিলতায় জড়াবেন না। ছেলেকে তাড়াতাড়ি চোখের সামনে থাকরে নিয়ে আসুন। আমি ভয় পাচ্ছি, ক্ষুধার তাড়নায় না জানি আবার চুরি-ডাকাতি করে বসে। তখন দেখবেন, কোর্টে গিয়ে সমস্ত খরচ ও ক্ষতিপূরণ আপনাকেই বদ করতে হবে। যত কিছু হোক, আপনি তার বাবা, তার অভিভাবক। আপনি লক্ষ্য করে দেখুন, যে কৃপণ বাবা ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবে। সম্পদের ক্ষতির আশঙ্কায় সে অস্থির হয়ে উঠবে।
আর এ কথাগুলো ছেলেরে সম্পদেরা নকলের সম্পদপ্রিয় স্বভাবের হয় তাহলে এভাবে বলুন ভাইর বাবা ছাড় তোমার কোনো উপায় নেই। দুদিন পর যখন তুমি বিয়ে করবে, মোহরের টাকা যে পরিশোধ করবে? আজ যদি তোমার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটা মেরামত কর টাকা পাবে কোথায়? হঠাৎ তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার লোক পাবে না। উদিকে তোমার ভাইয়েরা তোমার বাবার থেকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেদে টাকা-পয়সা, সহায়-সম্পত্তি সব কিছু তারাই ভোগ করবে।
তুমি এখানে বসে বিজ করতে পারবে না। ভেবে দেখো, বাবার কপালে একটি চুমু দিয়ে বা সান্ত্বনার সামান্য দুএকটি কথা বলে তুমি সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে পারো। আপনি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দাম্পত্য কলহ মেটানোর জন্যেও আপনি এই পদ্ধড়ি ব্যবহার করতে পারেন। মূলত, প্রত্যেকের হৃদয়ের দরজা খুলতে হবে তার উপযুক্ত চাবি দ্বারা। আপনি যে অফিসে চাকরি করেন সে অফিসের বস কাউকে ছুটি দিতে চায় না। তার কাছে আবেগ ও সামজিক ফর্মালিটির কোনো স্থান নেই। সে বোঝে শুধু কাজ আর কাজ।
তার কাছ থেকে যদি আপনার ছুটি নিতে হয় তাহলে তাকে বলুন, স্যার আমি কর্মোদ্যম ফিরে পাওয়ার জন্য তিনদিনের ছুটি চাই। তিনদিন পর আমি নব উদ্যমে কাজে যোগ দেবো। তীব্র কাজের চাপের কারণে আমি অনুভব করছি, দিন দনি আমার সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে। ব্রেনটাকে ফ্রেশ করার একটু সুযোগ আমারে দিন। মাত্র তিনদিন। দেখবেন, তিনদিন পর আমি আরো উদ্যমী ও কর্মঠ হয়ে কাজে ফিরবো। এভাবে বলতে পারলে দেখবেন, কাজ হয়ে গেছে।
মলিক যদি সামাজিক হোন; তার ব্যবহার আপনি বুঝে যান, সামাজিক বিষয়গুলোর প্রতি তিনি বেশ তাৎপর্য দেন, পরিবার ও সন্তানদের খুব ভালোবাসেন, আপনি তাকে এভাবে বলুন, স্যার! আমার সন্তানদের সাথে দেখা করার জন্য আমি কয়েকদিনের ছুটি চাই। আমি বেশ কিছুদিন থেকে বুঝতে পারছি, যেন আমি এব জগত থেকে তারা অন্য জগতে। আপনি যদি মানুষের সাথে এসব কৌশল নৈপুণ্যতা আয়ত্ত করেন তাহলে দেখবেন মানুষ বলাবলি করবে, মানুষের মন জয় করার ক্ষেত্রে অমুকের চেয়ে অধিক ভালে আর দেখিনি।
ফলাফল:
সকল মানুষের মন জয় করার একটি চাবি রয়েছে। তা হলো মানুষে স্বভাব সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারলে সেই চাবিকাটির সন্ধান পাওয়া সহজ হবে।
No Comment! Be the first one.