মানুষের সাথে কথা বলার ধরণ, কৌশল, নৈপুণ্যতা ব্যক্তি হিসেবে হওয়া উচিত। আপনি যখন কারো সাথে কথা বলবেন তখন তার উপযোগী কথাবর্তাই বলুন। আপনি মানব স্বভাবের দাবি। যুবকের সাথে নিশ্চয়ই সেভাবে কথা বলবেন না এটাই মাএকজন বিজ্ঞ আলিমের সাথে বলবেন। তদ্রূপ স্ত্রী ও বোনের সাথে আলাপচারিতার বিষয় ও ধরণ অভিন্ন হবে না। বিশেষ করে একজন যুবকের সাথে যে কথা চলে, একজন বয়স্ক লোকের সাথে সে কথা চলতে পারে না।
বোনকে যে ঘটনাটি শোনানো হয়েছে তা স্ত্রীরে শোনানো যাবে না। কোনো যুবকের সাথে যা আলোচনা করা হয়েছে তা বৃদ্ধ লোকের সামনে বলা যাবে না। বিষয়টি এমন নয়। আর ভিন্নতা দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলো, ঘটনাটি উপস্থাপনের ধরুণ ও ভঙ্গিতে সামান্য পার্থক্য করা, ক্ষেত্রবিশেষে সমস্ত কাঠামোকেই পাল্টে দেয়া। আপনাদের উদ্দেশ্যে একটি উদাহরণ দিলে আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আপনার দাদুর সাথে দেখা করতে কয়েকজন বয়স্ক মুরব্বী এলেন।
সকলের বয়স আশির ঊর্ধ্বে। আপনি যদি তাদের সাথে হাসতে হাসতে বন্ধুর সাথে ভ্রমণে যাওয়ার কাহিনী বলা আরম্ভ করেন, বা ফুটবল খেলার গল্প আরম্ভ করেন, কীভাবে আপনার বন্ধু গোল দিলো, কে মাথায় ও হাঁটুতে বল রেখে খেলা দেখাতে পারে, তাহলে এটা ব্যক্তি ও পরিবেশের কতটা উপযোগী হবে? অথবা আর আপনি দেখবেন, আপনি বাচ্চাদের সাথে গল্প করেন। তাদের সাথে যদি দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা আরম্ভ করেন তাহলে কেমন হবে?
এ বিষয়গুলো যে অনুপযোগী, তাতে আমরা সকলেই একমত। মানুষকে আকর্ষণ করার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, যে প্রসাথে ভালোবাসে তার নিকট সে প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলা। কোনো ভদ্র লোকের যদি স্বনামধন কোনো পুত্র থাকে তাহলে তার কাছে পুত্র সম্পর্কে জানতে চাওয়াই উচিত কারণ ভদ্রলোক নিঃসন্দেহে তার ছেলেকে নিয়ে গর্ব করেন ও তার সম্পর্কে আলোচনা করতে পছন্দ করেন। যদি কোনো দোকানদার দোকান খোলার পর কিছু বেচাকেনা করেছে।
এ মুহূরে আপনি তার কাছে গেলেন। তখন আপনি বেচাকেনা কেমন হচ্ছে, খরিদ্দারদের আনাগোনা কেমন, এসব বিষয়ে জানতে চান। কারণ এ জাতীয় আলোচনা তদ তার ভালো লাগাই স্বাভাবিক। দেখবেন, পরবর্তীতে সে আপনাকে দেখলে খুশ হবে, আপনার সাথে দুচারটা কথা বলতে চাইবে।
রাসূল (সা.) এ বিষয়টির প্রতি তাৎপর্য দিয়ে থাকতেন। এজন্য দেখা যায়, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-শিশু, মূলত শ্রোতার বিবেচনায় তার কথা বলার ধরণ হতো ভিন্ন ভিন্ন। হে রাসূল। এক মহান সাহাবী জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.)। ওহুদ যুদ্ধে তার পিতা শহীদ হন। তখন জাবেরের ওপর তার সহোদরা নয় বোনের দায়িত্ব এসে পড়ে। জাবের (রা.) ছিলেন তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। বাবার রেখে যাওয়া বিশাল ঋণের বোঝাও তাকে পরিশোধ করতে হবে। অথচ তখনও তিনি ছেলে মানুষ।
সবে যৌবনে পা দিয়েছেন। এত অল্প বয়সে বহুমুখী চাপে জাবের (রা.) বেশ পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন। সারাদিন তিনি চিন্তিত থাকতেন। ঋণের চিন্তা, বোনদের চিন্তা। সকাল-বিকাল পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধের তাগাদা। একবার রাত্রি বেলায় যাতুর রিকা অভিযানে রাসূল (সা.)-এর সাথে হযরত জাবের (রা.)ও বের হয়েছেন। দারিদ্রের কারণে তার সম্বল ছিল জীর্ণ-শীর্ণ একটি উট, নিজেরই যার পথ চলতে কষ্ট হয়। উৎকৃষ্টমানের উট কেনার ন্যয় সম্পদ জাবেরের ছিল না।
উটের ধীর গতির কারণে তিনি কাফেলার একেবারে পেছনে পড়ে গেলেন। আল্লাহ তা’য়ালার নবিও সৈন্যবাহিনীর পেছনে পেছনে চলছিলেন। তিনি জাবেরকে দেখতে পেলেন। সাথে তার জীর্ণ-শীর্ণ উটটিও নজরে পড়লো। রাসূল (সা.) নিকট এসে বলেন, হে জাবের! তোমার কী হয়েছে? জাবের বলেন, হে রাসূল! এই উটটির কারণে আমি পেছনে পড়ে গেছি। রাসূল (সা.) বলেন, উটটিকে বসাও। জাবের উটকে বসিয়ে দিলেন। রাসূল (সা.)ও নিজের উটকে বসিয়ে জাবেরকে বলেন, তোমার লাঠিটি আমাকে দাও অথবা আমার জন্য গাছ থেকে একটি ডাল কেটে আনো।
জাবের রাসূল (সা.)-কে নিজের লাঠি দিলেন। তার উটটি মাটিতে দুর্বল ক্লান্ত অবস্থায় বসে ছিল। রাসূল (সা.) সেদিকে এগিয়ে গেলেন ও উটটিকে লাঠি দ্বারা সামান্য আঘাত করেন। সাথে সাথে উটটি পরিপূর্ণ উদ্যমের সাথে দাঁড়িয়ে চলতে আরম্ভ করল। জাবের দৌড়ে উটের পিঠে চেপে বসলেন। রাসূল (সা.) ও জাবের (রা.) একসাথে চলছেন। জাবেরের মন খুব আনন্দিত। তার উটটি নতুন শক্তি ও উদ্যম ফিরে পেয়েছে। নবিজী জাবেরের সাথে কিছু কথাবার্তা বলতে চাইলেন।
তাছাড়া জাবের (রা.)-এর সাথে রাসূল (সা.) কী প্রসঙ্গে আলোচনা করেছিলেন? জারের তখন টগবগে যুবক। এ বয়সে সাধারণত যুবকদের মাথায় বিয়ে-শাদী ও জীবিকা আর্জনের চিন্তাই আনাগোনা করে বেশি। এজন্য রাসূল (সা.) বলেন, জাবের। তুমি বিয়ে করেছো? জাবের উত্তর দিলেন, হ্যাঁ।
রাসূল (সা.) বলেন, কুমারী না বিধবা? বিধবা। জাবের বলেন। অবিবাহিত এক যুবক ছেলে তার জীবনের প্রথম বিয়ে একজন বিধবাকে করে শুনে রাসূল (সা.) বেশ অবাক হলেন। তিনি জাবেরকে স্নেহের স্বরে বলেন কুমারী মেয়ে বিয়ে করলে না যে? তাহলে তোমরা একে অপরকে পের আনন্দিত হতে। জাবের (রা.) বলেন, হে রাসূল। আমার বাবা ওহুদের যুদ্ধে ইন্তেকাল করেন। জাবের নয়টি বোন আছে। তাদের দেখাশোনা করার মত আমি ছাড়া আর কো নেই।
তাই আমি তাদের বয়সী কোনো যুবতীকে বিয়ে করা সমীচীন ২০ করিনি। কারণ তার নিকট তাদের মতভেদের আশঙ্কাই বেশি। তাই বর্ত তাদের চেয়ে বয়স্ক এক মহিলাকে বিয়ে করেছি, যাতে সে তাদের মায়ের ভূমিক পালন করতে পারে। বিধবাকে বিয়ে করার পেছনে এটাই ছিল মূল রহস্য। রাসূল (সা.) তখন নিজের সামনে এমন এক যুবককে দেখছিলেন, যে নিজের বোনদের কল্যাণ চিন্তায় আপন আনন্দ-বিনোদনকে বিসর্জন দিয়েছে। তি তাকে যুবকদের উপযোগী কিছু কথা বলে খুশি করতে চাইলেন।
রাসূল (সা.) তাকে বলেন, আমরা মদিনা ফেরার পথে মদিনা থেকে পাঁচ মাই দূরের একটি স্থানের নাম থমবো, আমাদের আগমন সংবাদ তোমার স্ত্রী শুনদে সে তোমার জন্য পালঙ্ক প্রস্তুত করে রাখবে। তুমি বিধবাকে বিয়ে করেছো, ও নববধূ। সে তোমার আগমনে আনন্দিত হবে ও তোমার আরামের জন্য শয় প্রস্তুত করবে। রাসূল (সা.)-এর মুখে পালঙ্কের কথা শুনে জাবেরের নিজের ও তার বোনদে দারিদ্রের কথা স্মরণ হয়ে যায়। তিনি বলেন, পালঙ্ক আসবে কোথা থেকে! রাসূল! আমাদের ঘরে কোনো পালঙ্ক নেই।
রাসূল (সা.) তাদের সম্পর্কে বলেন, ইনশাআল্লাহ! অচিরেই তোমাদের যা পালঙ্ক আসবে। উভয়ে আবার চলতে শুরু করেন। রাসূল (সা.) জাবেরকে লি সম্পদ দিতে চাইলেন। তিনি বলেন, জাবের। সাথে সাথে জাবের (রা.) উত্ত দিলেন, রাসুলাল্লাহ! আমি উপস্থিত। রাসূল (সা.) বলেন, তুমি কি তোমার চটা আমার কাছে বিক্রি করবে? বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবের (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর প্রস্তাবে এই চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই উটটিই তার একমাত্র মূলধন। দুর্বল হলেও যৌ এখন শক্তিশালী ও সবল হয়ে গেছে। প্রস্তাব যে দিয়েছেন স্বয়ং রাসূল (সা.) এক দিরহার। রাসূল (সা.) বলেন।
জাবের (রা.) বলেন, হে রাসুল! না আমার লোকসান হয়ে যাবে। তাহলে দুই – দিরহামে। নবিজী বলেন। না, হে রাসূল। আমার লাভ হবে না। এভাবে দাম – বাড়তে বাড়তে চল্লিশ দিরহামে পৌছালো, যা এক উকিয়া স্বর্ণের সমপরিমাণ। জাবের (রা.) বলেন, ঠিক আছে। আমি রাজি। তবে আমার পক্ষ থেকে শর্ত হচ্ছে, এর উপর চড়ে আমি মদিনা পর্যন্ত যাবো। রাসূল (সা.) বলেন, ঠিক আছে। মদিনায় ফিরে জাবের নিজের বাড়িতে গিয়ে উটের পিঠ থেকে মালপাত্র নামালেন।
তারপর রাসূল (সা.)-এর সাথে নামায পড়ার জন্য মসজিদে এলেন। উটটিকে বেঁধে রাখলেন মসজিদের পাশে। নামায শেষে রাসূল (সা.) যখন বের হলেন, তখন জাবের বলেন, হে রাসূল! এই যে আপনার উট। রাসূল (সা.) বেলালকে বলেন, বেলাল। জাবেরকে চল্লিশ দিরহাম দিয়ে দাও। কিছু বাড়িয়ে দিও। একবার বেলাল (রা.) রাসূল (সা.)-এর আদেশ অনুযায়ী চল্লিশ দিরহামের চেয়ে বেশি জাবেরকে দিয়ে দিলেন। একপর্যায়ে জাবের দিরহামগুলো হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ফিরছিলেন, মনে মনে ভাবছিলেন, দিরহামগুলো কী কাজে লাগাবেন?
আরেকটা উট কিনবেন? বাড়ির জন্য কিছু আসবাবপত্র কিনবেন? নাকি? তারপর হঠাৎ রাসূল (সা.) বেলালকে বলেন, বেলাল। উটটি নিয়ে তুমি জাবেরকে দিয়ে দাও। এমন পরিস্থিতিতে বেলাল সাথে সাথে উট নিয়ে জাবের (রা.)-এর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। জাবের (রা.) বেলাল (রা.)-কে উট নিয়ে আসতে দেখে অবাক হলেন। মনে মনে আশঙ্কা করেন, রাসূল (সা.) বিক্রয় চুক্তি বাতিল করে দিলেন না তো? বেলাল (রা.), জাবের (রা.)-এর পাশে এসে বলেন, জাবের! তোমার উট নাও।
এক পর্যায় জাবের (রা.) বিস্মিত কন্ঠে বলেন, কেন? কি হয়েছে? বেলাল (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাকে বলেন, আমি যেন উটটা তোমার কাছে ফিরিয়ে দিই আর দিরহামগুলোও তোমার কাছে থাকবে। বেলালের কথা শুনে জাবের রাসূল (সা.)-এর নিকট এসে বলেন, হুজুর! আপনি কি উট নেবেন না? রাসূল (সা.) বলেন, আমি এত অল্প দামে উটটি নেয়ার জন্য তোমার সাথে দরাদরি করিনি। তাছাড়া আমি অনুমানর করতে চাচ্ছিলাম, এ মুহূর্তে কি পরিমাণ অর্থ দিলে তোমার প্রয়োজন পূরণ হবে।
আল্লাহু আকবর। কত উত্তম চরিত্র! সবক্ষেত্রে রাসূল (সা.) যুবকদের সাথে তাদের মানসিকতা বুঝে কথা বলতেন। আর যখন তাদেরকে সাহায্য করতে চাইতেন তখন দয়া ও স্নেহের চাঁদরে জাড়িয়ে তা আড়াল করে দিতেন।
একবার রাসূল (সা.)-এর পাশে এক সাহাবি বসা ছিলেন। তার নাম জুলাইবীর তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ নওজোয়ান সাহবিদের একজন। তিনি ছিলেন নিঃস্ব, অসহায়। দেখতে কিছুটা অসুন্দর। তখনো পর্যন্ত তিনি বিয়ে করেননি। সেদিন রাসূল (সা) তার নিকট কিছু কথা বলছিলেন। আমরা একটু অনুমান করি, একজন অবিবাহিত যুবক সাহাবির সাথে রাসুল (সা.)-এর আলোচনার বিষয়বস্তু কী হতে পারে? রাসূল (সা.) তার নিকট আরবের বংশপরিক্রমা নিয়ে আলোচনা করছিলেন কোনটি উঁচু বংশ, আন তোনটি নিচু বংশ?
তার নিকট বাজার ক্রয়-বিক্রয়ের নানা হুকুম-আহকাম নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? না, এ জাতীয় কোনো বিষয় নিয়ে রাসূল (সা.) তার নিরা আলোচনা করেননি। তাছাড়া রাসূল তার জন্য এক ভিন্ন প্রসঙ্গ নির্বাচন করেছিলেন, যা তার জন্য অন্য যে কোনো প্রসঙ্গ থেকে উপযোগী। রাসূল (সা.) তার নিকট বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। এমন কোনো যুবকরে পাওয়া যাবে না, যার কাছে এ প্রসঙ্গটি ভালো লাগবে না। একবার রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করার পরামর্শ দিলেন।
জুলাইবিব (রা.) বলেন, সমাজে আমি অচল, আমার কোনো মূল্য নেই। রাসূল (সা.) বলেন, ও আল্লাহর কাছে তুমি অচল নও। তারপর থেকে রাসূল (সা.) জুলাইবীবকে একটি ভালো জায়গায় বিয়ে দেয়ার চিন্তায় থাকলেন। একবার এক আনসারি সাহাবি রাসূল (সা.)-এর নিকট তার বিধবা মেয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব নিয়ে এলো। তার অভিপ্রায় ছিল, রাসুল (সা.) যেন তাকে বিয়ে করেন। এভাবে রাসূল (সা.) বলেন, আমি তোমার মেয়েল বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছি।
সাহাবি বলেন নিঃসন্দেহে, আমি প্রস্তুত। মল (সা.) বলেন, আমি নিজে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না। সাহাবি জানয়ে লন, তবে কার জন্য এ কথা বলছেন? রাসূল (সা.) বলেন, জুলাইবীবের জন্যে। আনসারি সাহাবী একটু চমকে উঠে বলেন, জুলাইবিব। হে রাসূল। মেয়ে এয়ের সাথে আমার একটু পরামর্শ করতে হবে। এ কথা বলে তিনি ফিরে গেলেন। বাড়িতে এসে স্ত্রীকে বলেন, রাসূল (সা.) তোমার মেয়ের সম্পরে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তারপর স্ত্রী বলল, এ বড় আনন্দের সংবাদ।
রাসূল (সা.) নিজের জন প্রস্তাব পাঠাননি। তবে কার জন্যে। রাসূল (সা.) তাকে জুলাইবিবের সাথে বিয়ে দিতে চান। ওই সময় তখন তা স্ত্রী বলল, এমন নিঃস্ব-ফকিরের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো। দেখতো সুন্দর নয়। আল্লাহর শপথ। জুলাইবিবের সাথে আমি মেয়ের বিয়ে দেবো ন এদিকে আমরা অমুক অমুকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।
তখন মেয়ের বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি যখন রাসূল (সা.)-এর নিকট । আসার জন্য উদ্যত হলেন, ঘরের ভেতর থেকে মেয়ে জানতে চাইলো, আপনাদের কাছে কে প্রস্তাব পাঠিয়েছে? তারা বলেন, রাসূল (সা.)। এ অবস্থায় মেয়েটি বলল, আপনারা রাসূল (সা.)-এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে চাইচেন! আমাকে রাসুল (সা.)-এর সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দিন। তিনি কখনোই আমার জন্য ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। তার এ কথা বাবা-মায়ের কাছে খুব ভালো শুরু করে। তাদের পেরেশানীও দূর হলো।
তার পিতা রাসূল (সা.)-এর নিকট গিয়ে বলেন, আমার মেয়ের দায়িত্ব আপনার ওপর। আপনি তাকে জুলাইবিবের সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। এ কারণে রাসূল (সা.) তাকে জুলাইবীবের সাথে বিয়ে দিয়ে তাদের জন্য দোয়া করেন, হে আল্লাহ! তাদের ওপর তুমি কল্যাণের বারিধারা বর্ষণ করো এবং তাদের জীবনকে কষ্টমুক্ত করো। কিছুদিন পর রাসূল (সা.) এক গযওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। জুলাইবিবও রাসূল (সা.)-এর সাথে ছিলেন। যুদ্ধ শেষে সকলে যখন সাথীদের তালাশ করতে করতে শুরু করেন, রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা কি কাউকে খুঁজে পাচ্ছ না।
সাহাবিরা বলেন, আমরা অমুক অমুককে পাচ্ছি না। রাসূল (সা.) কিছু সময় চুপ থেকে আবারো বলেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়ে ফেলেছো? তারা বলল, আমরা অমুক অমুককে হারিয়ে ফেলেছি। রাসূল (সা.) আবারও চুপ থেকে বলেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়েছো? তারা একই জবাব দিলো। তখন রাসূল (সা.) বলেন, আমি জুলাইবীবকে কোথাও দেখছি না। এবার সকলে তাকে খোঁজা আরম্ভ করল। যুদ্ধের ময়দানে নিহতদের মাঝে তাকে পাওয়া গেল না। পাওয়া গেল একটু দূরে এক জায়গায়।
তার আশেপাশে পড়েছিল সাতজন মুশরিকের লাশ; যাদের হত্যা করে তিনি শহীদ হয়েছেন। একবার রাসূল (সা.) তার লাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। বলেন, সে সাতজনকে হত্যা করার পর শহীদ হয়েছে। সে সাতজনকে হত্যা করার পর শহীদ হয়েছে। সে আমার অংশ, আমি তার অংশ। রাসূল (সা.) তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে কবর খননের আদেশ দিলেন। আনাস (রা.) বলেন, আমরা কবর খুঁড়ছিলাম। জুলাইবীবের লাশ কাঁধে নিয়ে রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে ছিলেন।
রাসূল (সা.)-এর কাঁধই ছিল তার খাট। কবর খোঁড়া শেষ হলে রাসূল (সা.) নিজ হাতে তাকে কবরে শুইয়ে দিলেন। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! জুলাইবিবের মৃত্যুর পর আনসারি সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তার বিধবা স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য প্রতিযোগিতা লেগে যায়। রাসূল (সা.) প্রত্যেকের সাথে তার উপযোগী বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। এ কারণে রাসূল (সা.) কাছে এসে তার কথা শুনে কেউ বিরক্ত হতো না।
একবার রাসূল (সা.) আয়েশার পাশে বসে তার নিকট কিছু সময় গল্প করেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো বিষয়ের আলোচনা সর্বাধিক উপযোগী? তার নিরা রাসূল (সা.) রোমের যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনা করেছিলেন, নাকি বিজি অস্ত্রশস্ত্রের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? এমন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে রাসূল (সা.) আদৌ আলোচনা করবেন না। কারণ আয়েশা আবু বকর নন, তার নিকট এসব গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
রাসূল (সা.) তার নিকট মুসলমানদের দারিদ্রতা এবং তাদের কী কী প্রয়োজন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? এটাও রাসূল (সা.) করবেন না কারণ তিনি উসমান নন। তিনি আয়েশার সাথে দাম্পত্যসূলভ ভালোবাসার কথ বলেন। রাসূল (সা.) তাকে বলেন, তুমি যখন আমার ওপর সন্তুষ্ট থাক তয় আমি বুঝতে পারি। আবার আমার ওপর রাগ করলেও ধরতে পারি। তারপ আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, কীভাবে? রাসূল (সা.) বললেন, তুমি যখন সন্তুষ্ট থাক তখন বলবে, মুহাম্মদের রক্তে কসম!
যখন আমার ওপর রেগে থাকো তখন বলো, ইবরাহিমের রবের কসম। এভাবেই প্রায় রেগে গেলে আয়েশা (রা.) বলতেন, আপনি ঠিক বলেছেন। তার খোদার কসম! রাগের সময় আমি শুধু আপনার নামটিই নিলাম না। যয় আমরাও সে বিষয়গুলোতে জড়িয়ে পড়ি তখন এ সুন্নতটির অনুসরণ করতে পাঠ না?
লক্ষ্যনীয়:
আপনি মানুষের সাথে এমন কথা বলুন, যেগুলো তারা শুনতে ভালোবাসে; এস কথা বলবেন না, যা শুধু আপনার ভালোলাগে।
No Comment! Be the first one.