মসৃণ ত্বক, স্বাস্থ্যকর চুল আর সুস্থ হার্ট এর জন্য আমাদের প্রতি সপ্তাহে তৈলাক্ত মাছ খাওয়া প্রয়োজন। যে মাছে ভালো পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাট আছে। ইউরোপ, আমেরিকায়ও বলা হয় ত্বক ও সুন্দর চুলের জন্য তৈলাক্ত মাছ খেতে। কিন্তু বাঙালি হিসেবে আমাদের কোন মাছ খাওয়া উচিত?
আমাদের যে বিল-ঝিল, নদী-নালায় যে মাছ পাওয়া যায়, তার কোনটাতে কি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাট আছে?
চলুন আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানব যে, আমাদের দেশের কোন কোন মাছগুলোতে সবচেয়ে বেশি ওমেগা থ্রি ফ্যাট আছে।
ইলিশ মাছ ( Ilish Fish )
ইলিশ মাছ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। আর এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Tenualosa ilisha. এই ইলিশ মাছটি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে এটি ডিম পাড়ার জন্য আগমন করে। বাঙ্গালীদের কাছে এই মাছ খুবই জনপ্রিয়।
দেশি মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া গেছে ইলিশ মাছে। বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের খুলনার মাছ বাজার থেকে নেওয়া ইলিশ মাছের উপরে গবেষণায় প্রতি 100 গ্রাম ইলিশে ১৫১০ মিলিগ্রাম ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া গেছে।
তাছাড়া ভারতের মাছ বাজার থেকে নেওয়া গবেষণায় ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া গেছে ১২৩৯ মিলিগ্রাম। সেই তুলনায় স্যালমন মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া যায় ১৪৩৬ মিলিগ্রাম।
বাটা বা পারশে মাছ ( Bata Labeo/ Parshe Fish )
বাটা মাছ অনেকেই একে পারশে মাছ হিসেবে কিংবা পাইসা মাছ বলে থাকে। আমি আমার এই ব্লগ পোস্টটিতে কিছু ছবি দিয়ে দেবো, যেন আপনারা সহজে চিনতে পারেন। এই মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া গেছে ৫২০ মিলিগ্রাম।
পুটি মাছ ( Putty Fish / Swamp Barb )
অনেকেই এটিকে জাতপুটি মাছ হিসেবেও চেনেন। ভারতের গবেষণায় পাওয়া গেছে প্রতি 100 গ্রামে প্রায় 466 মিলিগ্রাম ওমেগা থ্রি ফ্যাট রয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট থেকে নেওয়া মাছে পাওয়া গেছে ১২৬ মিলিগ্রাম।
কাজলি মাছ / বাঁশ পাতা ( Jamuna ailia / Broad-mouthrd mullet or Large-scaled mullet )
সিলেটের মাছ বাজার থেকে নেওয়া কাজলি মাছে প্রতি 100 গ্রামে 350 মিলিগ্রাম ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া গেছে।
চাপিলা মাছ ( Ganges River Gizzard Shad )
চাপিলা মাছ মূলত দেখতে ছোট চ্যাপ্টা মাছের মত এবং এটি একটি স্বাদুপানির মাছ। এতে ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া গেছে ৩৪২ মিলিগ্রাম এবং ভালো পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন শরীরে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। এই মাছটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
১৯ থেকে ৫০ বছরের শরীরে যতটুকু ক্যালসিয়াম দরকার সেটা ১০০ গ্রাম চাপিলা মাছেই পাওয়া যায়। এই মাছ ভিটামিন B12 এ ভরপুর।
প্রাপ্ত বয়স্কদের দিনে যতখানি ভিটামিন B12 দরকার, ১০০ গ্রাম চাপিলা মাছে তার দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণ থাকে। চাপিলা আমার একটু বেশি প্রিয় মাছ, তাই একটু বাড়তি তথ্য দিয়ে দিলাম।
মহাশোল মাছ ( Snakehead murrel )
ভারতের মাছ বাজার থেকে নেওয়া মহাশোল মাছে প্রতি 100 গ্রামে প্রায় ৩১৭ মিলিগ্রাম ওমেগা থ্রি ফ্যাট পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে এ মাছটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষণার ফলে এ মাছ আবার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত যে তথ্যগুলো দিয়েছে সেটি প্রতি 100 গ্রামের জন্য। এ সংখ্যাগুলো একদম দরা-বাধা নাহ। মৌসুম ভেদে, জায়গা ভেদে এক এক রকম হতে পারে। মাছের খাবার, বয়সসহ আরো অনেক কিছুর উপর এগুলো নির্ভর করে।
Note : ওমেগা থ্রি ফ্ল্যাটের হিসাব করা হয় EPA এবং DHA এর পরিমাণ দিয়ে।
তাছাড়া অন্যান্য মাছেও ভালো পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাট থাকতে পারে। আজকের আর্টিকেলটিতে যে মাছগুলোর কথা আমি আপনাদেরকে জানিয়েছে সেগুলো কেবল গবেষণার ভিত্তিতে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি।
কি পরিমাণে মাছ খাবেন?
প্রতি সপ্তাহে মাছ খাওয়ার সাথে, বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ খাওয়ার সাথে হার্টের রোগ, হার্টে যদি রিং পড়াতে হয়, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইনস্টক এসবের ঝুঁকি কমার সম্পর্ক পাওয়া গেছে অনেক গবেষণায়। তৈলাক্ত মাছের যে ওমেগা থ্রি ফ্যাট থাকে, সেটার অভাবে চামড়া খুসখুসে হতে পারে এবং চুল পড়ে যেতে পারে।
সর্বোপরি একটি ব্যালেন্স ডায়েট এর জন্য প্রতি সপ্তাহে মাছ খাওয়া প্রয়োজন বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ।
কতটুকু খাবেন? সপ্তাহের অন্তত ২৮০ গ্রাম মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য মাছের সাথে অর্ধেক হলেও এই তৈলাক্ত মাছ খাওয়া উচিত।
যে মাছগুলোর কথা এতক্ষণ আলোচনা করেছি অর্থাৎ উপরের দিকের গুলো যেইটা যখন সহজলভ্য সেইটা তখন খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
সতর্কতা : সতর্কতা হল নারীরা যারা গর্ভবতী কিংবা সবে মাত্র গর্ববতী হয়েছেন, তারা অন্যদের মতোই সপ্তাহে ২৮০ গ্রাম ফ্যাট মাছ খাবেন। যার মধ্যে অর্ধেক তৈলাক্ত মাছ খাবেন। যদি শুধু সামুদ্রিক কিংবা তৈলাক্ত মাছ খান, দিনের সচরাচর খাওয়া হয় না তবুও বলছি, সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে ২৮০ গ্রামের বেশি তৈলাক্ত কিংবা সামুদ্রিক মাছ খাবেন না।
বিশেষ করে বড়মাছ, যেগুলো অনেকদিন ধরে বেঁচে থাকে। কারণ তাদের গায়ে কিছু দূষিত পদার্থ জমা থাকতে পারে, যা গর্ভধারণ করলে শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
No Comment! Be the first one.