একবার আমার মোবাইল ফোনে একটি এস-এম-এস আসে, তাতে লেখা ছিল। আত্মহত্যার হুকুম কী? আমি এমন সংবাদ পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করি। একজন উঠতি যুবকের কণ্ঠ শুনতে পেয়ে আমি বললাম, দুঃখিত! আমি তোমার প্রশ্ন বুঝতে পারিনি। প্রশ্নটি আবার বলো, সে বিরক্তির সাথে বলল, আমার প্রশ্নটি সুস্পষ্ট। আমি জানতে চাই, আত্মহত্যার হুকুম কী? তখন আমার মন চাইলো, আমি তাকে অপ্রত্যাশিত জবাব দিই। এরপর আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, মুস্তাহাব।
ছেলেটি এমন জবাব শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে বলল, কী বলেন? আমি বললাম, তুমি ঠিকই বলেছো। তুমি কি একবার ভাবোনি, আমি তোমার সাথে আত্মহত্যা সম্পর্কে কথা বলবো? তখন ওই যুবক একেবারেই চুপ হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে আমি বললাম, তুমি আত্মহত্যা করতে চাও কেন? জবাবে ছেলেটি বলল, আমি বেকার, কোন চাকুরী জোগাড় করতে পারিনি। তাই লোকজন আমাকে ভালোবাসে না। এখন আমি এক ব্যর্থ মানুষ! এভাবেই ঐ যুবক এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলেন। পর্যায়ক্রমে সে তার ব্যর্থ ও অযোগ্যতার এক বিশাল ঘটনা আমাকে শোনালো।
বর্তমানে বেশিরভাগ লোকের একটি বড় সমস্যা হলো, কিছু কিছু লোক সর্বময় নিজ সম্পর্কে তুচ্ছজ্ঞান করে থাকে। সে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানকারীদের দিকে দেখে ভাবে, তাদের জন্যে তো সম্ভব, যে মর্যাদার শীর্ষ চূড়ায় উপনীত ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে থাকে, যদি সবার জন্য সম্ভব হয়, তাহলে অন্তত আমার পক্ষে এমন মর্যাদা ও গৌরব অর্জন করা সম্ভব নয়।
জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা, বড় হওয়ার আশা পোষণ করা, আমার জন্য কখনো শোভা পায় না। আমার স্বভাব ও প্রকৃতির মাঝে কোনো রকমের পরিবর্তন হবে না। এভাবেই জীবনের পথ চলা শিখতে হবে। কবি তাদের সম্পর্কে বলেন: يَعِشُ أَبَدَ الدَّهْرِ بَيْنَ الْحُفَرِ * وَمَنْ يَتَهَيَّبْ صُعُودَ الْجِبَالِ
যে ব্যক্তি পর্বত-চূড়ায় উঠতে ভয় পায়, আজীবন সে গর্তেই থেকে যায়।
এ জীবন চলার পথে জ্ঞানের আলো নিতে পারবে না? যারাই নিজ দুর্বলতা ত্রুটি- বিচ্যুতির সামনে আত্মসমর্পণ করে, ভেঙ্গে পড়ে, ভুল ও অসম্পূর্ণতাকে নিজের ভাগ্য বলে মেনে নেয় এবং আরো বলে, এটা আমার স্বভাবজাত দুর্বলতা। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আমার জানা নেই।
তাছাড়া লোকজন আমার এ স্বভাবের সাথে অভ্যস্থ হয়ে গেছে, আমার স্বভাব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকে না। মানুষ আমাকে পেয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে থাকে। আমি বক্তৃতায় খালেদের মতো হবো কিংবা আহমদের মতো প্রফুল্ল হাস্যোজ্জ্বল কিংবা যিয়াদের মতো মানুষের প্রিয়ভাজন হবো, এটা আমার জন্য এক আকাশ-কুসুম কল্পনা যা সম্ভব নয়! যারা এমন ধারণা করে থাকে তারা কখনো এই বইটি থেকে উপকৃত হতে পারবে না। নিঃসন্দেহে এ জাতীয় এবং অন্যান্য বই থেকেও জীবনের চলার পথে আলো গ্রহণ করতে পারবে না।
একবার আমি এক মসজিলেস বসা ছিলাম। আমার কাছেই বসেছিলেন একজন বৃদ্ধ লোক জীবনের সূর্য এখন অস্ত যাওয়ার পথে। আর ঐ মসলিসটি ছিলো অধিকাংশ সাধারণ লোক। ঐ মজলিসে, একবার আমি শায়খ আবদুল আযিয বিন বাযের একটি ফতোয়ার কথা আলোচনা করি। তাছাড়া, সে আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই লোকটি অনেক গর্ব নিয়ে বলতে লাগলেন, আমি শায়েখ বিন বাযের সহপাঠী ছিলাম। আমরা দু’জন এক সাথে শায়েখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীমের দরসে বসতাম আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের কথা। বৃদ্ধ লোকটিকে দেখে বুঝলাম, যে শায়খ বিন বাষের সাথী হওয়ার জন্য তিনি বেশ গর্ববোধ করেছেন। এজন্যে তিনি আজ উৎফুল্ল। তিনি জীবনসংগ্রামে সফল একজন ব্যক্তির একবার সঙ্গ পেয়ে আজ নিজেকে সম্মানিত মনে করেছেন।
তখন আমি বললাম, হে জীবন সংগ্রামী প্রবীণ ও বিখ্যাত মুসাফির! একজন ব্যক্তির সহপাঠি হতে পেরে আপনি এতই গর্ববোধ করেন, তাহলে আপনি নিজে কেন সফল হলেন না? দুজন একই পথে হাঁটলেন, আপনি কেন বিন বাযের মতো ঠিকমত জায়গা গিয়ে পৌঁছাতে পারলেন না? শায়খ ইবনে বায মারা যাওয়ার কারণে, তখন আকাশ-যমিন তার জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সকলের মাঝে যেন বেদনার অশ্রু ঝরেছিলো। সমস্ত লোকের মাঝে শোকের ছায়া পড়ে যায়। মিম্বরে-মিনারে, মেহরাবে-লাইব্রেরী ও গ্রন্থাগারে কান্নার রোল পড়ে যায়।
আপনিও তো একবার ইন্তেকাল করবেন, হতে পারে সেদিন কেউ আপনার জন্যে কাঁদবে না। হয়তো কাঁদবে দু’একজন সামাজিকতা রক্ষা করা ছাড়া কারো চোখ থেকে অশ্রু ঝরবে না। এটা ঠিক, আমরা সকলেই একত্রিত হয়ে বলতে পারি, আমার পরিচয় আছে সেই মহান ব্যক্তির সাথে। তার নিকট আমার বহু ঘনিষ্টতা সম্পর্ক রয়েছে। যে ছাত্রজীবনে থেকে শুরু করে আমরা একই সাথে পড়াশুনা। মূলত এতে গর্ব করার যে কিছুই নেই। গৌরব হচ্ছে আপনিও সাফল্যের সেই চূড়ায় আরোহণ করবেন, যেখানে আপনার সাথী আরোহণ করেছেন।
আমি বলব, এখন থেকে আপনিও সাহসী হোন; এখন থেকে প্রতিজ্ঞা করুন। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলান। তাহলেই নেতিবাচক মানসিকতা অর্জন করতে পারবেন। একটু ভাবুন যে কীভাবে সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। মলিনতাকে আনন্দে আর দুশ্চিন্তাকে সুচিন্তায়, কৃপণতাকে দানশীলতায়, আপনি গোস্বাকে ছেড়ে সবর করুন। আর নিকষ কালো বিপদের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে বের করুন। ঈমানকে অস্ত্রে পরিণত করে সমস্ত বাধা জয় করে এগিয়ে যান।
জীবন উপভোগ করতে শিখুন। জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও ক্ষুদ্র। এ জীবন চলার পথে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী করার মতো পর্যাপ্ত সময় আমাদের হাতে নেই। দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী কীভাবে ত্যাগ করবেন, কীভাবে টেনশনমুক্ত থাকবেন, আমি তা জানানোর জন্যেই এ গ্রন্থটি রচনা করেছি। আপনিও এ পথচলার মাঝে আমাদের সাথী হতে পারেন। ইনশাআল্লাহ একদিন আমরা একসাথে যেতে পারবো সফলতার শেষ মঞ্চিলে।
আমাদের সাথে থাকবেন:
সাহসী তো সেই ব্যক্তি, যার আছে উচ্চ মনোবল ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, আরো আছে দক্ষতা কাজে লাগানোর সিমাহীন প্রচেষ্টা।
No Comment! Be the first one.